থার্টিফার্স্টের অনুষ্ঠান দিনে করার পরামর্শ

Slider জাতীয়

031751Pic-14

 

 

 

 

 

দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশি-বিদেশি চক্র সক্রিয় আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্ধারিত এজেন্ডা শেষে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ সতর্কবার্তা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এ বৈঠক হয়। পরে একজন সিনিয়র মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানান। এদিকে থার্টিফার্স্টে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান না করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে তিনি থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্যাপন করতে বলেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মন্ত্রী আরো জানান, বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে বড় করে থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্যাপনের বিষয়টি মন্ত্রীদের অবহিত করেন। তাঁর বক্তব্যের পর সম্প্রতি মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অস্ত্র, গোলা-বারুদসহ জঙ্গি গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে ধরেন মন্ত্রীরা। মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য এতে অংশ নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।

২৪ ডিসেম্বর মিরপুরে জেএমবির আস্তানায় অভিযান, ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাগমারায় কাদিয়ানি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ২৭ ডিসেম্বর রাতে গাজীপুরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে এক বাড়িতে অভিযান চালানোর ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ নিয়ে চক্রান্তকারীর অভাব নেই। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশি-বিদেশি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা ছক নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

মন্ত্রীদের সতর্ক থাকা এবং পরিস্থিতি বুঝে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক চাপ উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, রায় কার্যকর হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার সঙ্গে জড়িত রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সব দায়িত্ব শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একার নয়, সবাইকেই যার যার অবস্থান থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে হবে। অবহেলা করা যাবে না। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’

থার্টিফার্স্টে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান না করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

থার্টিফার্স্টে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান না করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে তিনি থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্যাপন করতে বলেছেন। যেকোনো আনন্দ উৎসব পালনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করতেও বলেছেন শেখ হাসিনা।

ওই আলোচনায় মেনন আন্তর্জাতিক পর্যটন বর্ষ উপলক্ষে আতশবাজিসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। এ আলোচনার সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘থার্টিফার্স্ট নাইটে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান করা ঠিক হবে না। আনন্দ করতে কোনো বাধা নেই। তবে তা রাতে না করাই ভালো। সব সময় একভাবে আনন্দ করতে হবে এমন নয়। দিনের বেলায়ও তো আনন্দ করা যায়।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতির কারণে কক্সবাজারে আয়োজিত আতশবাজি স্থগিত করা হয়েছে। তবে অন্যান্য কর্মসূচি চলবে।

আলোচনায় বাংলা নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ছাত্রী লাঞ্ছনার প্রসঙ্গও ওঠে। আলোচকরা জানান, এ ঘটনায় কেউ সাক্ষ্য দেয়নি; এমনকি নির্যাতিত ছাত্রীও কোনো বক্তব্য দেয়নি। কোনো রকম সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। এই প্রতিবেদন নিয়ে এখন আবার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর আইন অনুমোদন

মন্ত্রিসভা ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর আইন, ২০১৫’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। এই আইনের অধীনে একটি অধিদপ্তর গঠন করা হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ কথা জানান। তিনি আরো জানান, ক্যাডেট কোর এত দিন ১৯৫০ সালের আইনে চলছিল। এখন এর পরিধি বেড়েছে। এ কারণে নতুন আইন প্রণয়ন ও এর আওতায় অধিদপ্তর গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকার বিএনসিসি অধিদপ্তর হবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে একজন মহাপরিচালক থাকবেন। বিএনসিসিতে সশস্ত্র বাহিনী থেকে সংযুক্ত বা প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা যদি শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেন, তাহলে নিজ বাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনসিসিতে যুক্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যরা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে অধিদপ্তর বা কোরের সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বিএনসিসিতে যুক্ত জনপ্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী শাস্তি পাবেন বলে মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে পর্যটন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাসমান চাষাবাদ পদ্ধতিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়। একই দিনে পররাষ্ট্র, পরিবেশ ও বন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তিনটি বিষয় মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *