ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেছেন, বন্ধুপ্রতিম দুই প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারতকে হাতে হাত রেখে একসঙ্গে চলতে হবে। এই পথচলা উন্নয়নের স্বার্থে, বাস্তবতার দাবিতে। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন থাকতে পারে, কোনো কোনো বিষয়ে মতবিরোধও থাকতে পারে, তবে সবার ওপরে দুই দেশের উন্নয়ন।
গতকাল শনিবার অপরাহ্নে ঢাকা ক্লাবে সমকাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পঙ্কজ শরণ বক্তব্য রাখছিলেন। ভারতীয় হাইকমিশনার ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। তার নতুন কর্মস্থল হবে মস্কো। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, সম্পাদকসহ বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
পঙ্কজ শরণ বলেন, বিশ্বে দক্ষিণ এশিয়া পরিচিত সংঘর্ষ, ক্ষুধা, দারিদ্র্যের জন্য। এই পরিচিতি এখন মুছে ফেলার সময় এসেছে। উন্নত বিশ্বে কীভাবে প্রতিবেশীদের মধ্যে উন্নয়ন ও সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কীভাবে তারা আঞ্চলিক সহযোগিতার নীতিতে বহুদূর এগিয়ে গেছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব বাস্তবতা ও দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতার মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক এবং যৌথ উন্নয়ন পরিকল্পনা ছাড়া এককভাবে কারও পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। ভারত বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বন্ধু প্রতিবেশী। দুটি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপড়েন হয়তো রয়েছে। কিন্তু দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জন্য অধিকতর কল্যাণকর কিছু করতে হলে এসব গৌণ বলেই প্রতিপন্ন হবে।
তিনি বলেন, শুধু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নয়, বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভেতরে অনেক সমস্যার ঐতিহাসিক সমাধান হয়েছে। আগামী দিনে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে তিনি মনে করেন।
আবেগজড়িত কণ্ঠে পঙ্কজ শরণ বলেন, কূটনীতিক হিসেবে তার প্রায় ১৪ বছরের দায়িত্ব পালনের মধ্যে প্রায় সাত বছরই কেটেছে বাংলাদেশে। এ দেশের বিভিন্ন এলাকা তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশের নিসর্গ, এখানকার মানুষের আতিথেয়তা, কর্মনিষ্ঠা তাকে মুগ্ধ করেছে। এখানে মানুষ সংকটকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে। তবে তিনি যেখানেই যান, বাংলাদেশ তার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
নুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদ খান, জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ঢাকা ক্লাবের সভাপতি খায়রুল মজিদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও এটিএন বাংলার এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল, সিনিয়র সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার, নিউজ টু ডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম মুকাদ্দেম হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম হেলাল, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রকিবউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল হক মুকুল, সদস্য উম্মে বাতুল মাহমুদা খাতুন মিনা, টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন, ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী খন্দকার মসিউজ্জামান রুমেল, ঢাকা ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আলি কবির চাঁন, সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বেস্ট ইস্টার্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া নাঈম হাবিব, সমকালের ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর ইমরান কাদির প্রমুখ।
এর আগে সমকাল সম্পাদক ভারতীয় হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, পঙ্কজ শরণ দুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। একজন সফল কূটনীতিক হিসেবে তাকে এ দেশের মানুষ স্মরণ করবে। সমকালের প্রকাশক এ. কে. আজাদ পুষ্পস্তবক দিয়ে ভারতীয় কমিশনারকে স্বাগত জানান। তাকে একটি নকশিকাঁথা উপহার দেওয়া হয়।