কৃষকের বোরো ধানের গাছ ও শীষে কলাপাকা রঙ ধরেছে। জ্যৈষ্ঠে ভাপসা গরমে মাথার ওপরে মেঘ-বৃষ্টি নিয়ে বোরো ধান চাষ করছেন চাষি ও শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে গেল ৫ দিনের ১৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় জমিতে হেলে পড়ে আছে বোরো ধান। আর নিচু জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবন্ধতা। এমন অবস্থায় ধান কাটতে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগায় বেকায়দায় পড়েছেন বোরো চাষিরা।
এবছর রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। কৃষি অফিস বলছে- আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে ধানের। চাষিরা জমি থেকে ধান মাড়ায়ের পরে ২ দিন রোদে শুকিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে- শনিবার (২৪ মে) রাজশাহীতে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার আগের দিন শুক্রবার ৩১ দশমিক ৮ মিলিমিটার ও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজশাহী বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৪ মিলিমিটার। গত ২৫ মে ২৫ মিলিমিটার ও ২৬ মে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এই বৃষ্টিপাতের সময় রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। এতে করে অনেক কৃষকের বোরো ধান জমিতে হেলে পড়েছে। কারও কারও জমিতে পড়ে যাওয়া ধানের শীষ পানিতে তলিয়ে গেছে।
পবা উপজেলার পরিলা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর হাট এলাকার বোরো চাষি সাজ্জাদ হোসেন। তার এ বছর ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান রয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জাতের ধান রয়েছে ১ বিঘা ও ২৯ জাতের ধান রয়েছে ২ বিঘা জমিতে।
তিনি বলেন, ২৮ জাতের ধান ও ধানের গাছে কলাপড়া রঙ ধরেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কেটে ঘরে তুলতে হবে। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে পানি শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় প্রয়োজন। নতুবা ধানের খড় পোচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে লোকসান হবে। তিনি বলেন- এই বোরো ধানে সেচ ও সার খরচ বেশি। তাই ধানের খড় বিক্রি করে পুষিয়ে নেন চাষিরা।
নগরীর বুধপাড়ায় তিন বিঘা জমিতে বোরোধানের চাষ করেছেন মোয়াজ্জোম হোসেন। এর মধ্যে চার কাঠা জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করেন তিনি। ২৮ জাতের ধানগুলো একসপ্তাহ আগে কাটা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিপাতের ফলে জমি থেকে ধান তোলা সম্ভব হয়নি তার। এমন অবস্থায় বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমে গেছে। আর অন্য ধানগুলো বাতাসে জমিতে পড়ে গেছে।
মোয়াজ্জোম হোসেন বলেন, যে ধানগুলো জমিতে পড়েছে সেগুলো জমা পানিতে ডুবে আছে। ধানগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটা না গেলে পুরোদমে নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া যে ধানগুলো আগে কাটা ছিল সেগুলোর চারা জগাতে শুরু করেছে। এই ধানের চাল হবে না। আর হলেও ভাতে গন্ধ বের হবে। একই সঙ্গে পানি জমে পচন ধরেছে ধানের খড়ে।
তিনি বলেন, এখন জমি থেকে পানি নিষ্কাশন না করা পর্যন্ত ধান কাটা যাবে না। জমি থেকে পানি সেচে বের করতে খরচ হবে আড়ায় থেকে তিন হাজার টাকা। এরমধ্যে ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। তার এলাকায় দুর্গাপুর উপজেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে ধান কেটেছেন সিরাজুল ইসলাম বলে জানান তিনি।
ধান কাটার বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জেলার দুর্গাপুর উপজেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে চার বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকে ৫৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে কাজের মজুরি। জমিতে পড়ে যাওয়া ধান কাটতে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে। আরও এক বিঘা জমির ধান কাটতে বাকি আছে। বৃষ্টিপাতের কারণে শ্রমিকরা গত দুদিন আসেনি। আকাশ পরিষ্কার হলে শ্রমিকরা এসে ধান কাটাবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, আমি অসুস্থ। পাবনার ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহীতে আসছি। পরে কথা বলব।