চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো বেগুনি রঙের ধান চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক মো. রবিউল ইসলাম। এই ধান চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন এ ধানের খেত দেখতে আগ্রহী মানুষ ভিড় করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নতুন চাষ শুরু হওয়া এ ধানের নাম পার্পল লিফ রাইস। দেশে সর্বপ্রথম এ জাতের ধানের আবাদ শুরু হয়েছিল গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধান। ধানের গায়ের রং সোনালি ও চালের রং বেগুনি। উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫-১৫৫ দিন। অন্য জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের গোছা প্রতি কুশির পরিমাণ বেশি থাকায় একরপ্রতি ফলনও বেশ ভালো। একরপ্রতি ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মণ হয়ে থাকে। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা। তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু।
বেগুনি রঙের ধান দেখতে আসা মো. আব্দুস সামাদ নামে একজন বলেন, নাচোল থেকে যাবার পথে ধানটি দেখে আমরা এখানে নামলাম। ধানটি দেখে খুব ভালো লাগছে কারণ এটি নতুন জাতের ধান। আসলে আমরা কৃষক মানুষ তাই কৃষিকাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। এই ধানটি দেখে নিজের মধ্যে আগ্রহ জাগলো যে আমারোও এই ধানটি চাষ করার ইচ্ছা এবং এই নতুন জাতের ধান দেখে আমার অনুপ্রেরণা হলো। আমি আগামীতে এই ধান চাষির সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ধানটি চাষ করার চেষ্টা করবো।
স্থানীয় কৃষক জাকির হোসেন বলেন, আমার রবিউল চাচা এই ধান চাষ করেছে। এই ধান দেখে আমাকে খুব ভালো লাগছে। এ ধান চাষ করার জন্য আমিও খুব আগ্রহী। সামনের বার আমি এই ধান চাষ করবো।
ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার সিহাব আলী জানান, এটি নতুন জাতের ধান। ধান দেখে আমাদের খুব ভালো লেগেছে। বেশি যদি ফলন হয় তাহলে আমরা এই কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা নিজেরাই উৎপাদন করবো এবং আমাদের পাশের যে কৃষকগুলো আছে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবো, এই ধানটি রোপণ করার জন্য।
কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, আমি এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাওয়া আসা করি। এই ধরনের ধান আমি এর আগে কোথাও দেখিনি। প্রতিদিন দেখি ধানটা। এখন আবার দেখছি বেগুনি কালারের গাছ হলেও শিষটা অন্যান্য ধানের মতোই।
রহনপুর পৌরসভার পিড়াহসন গ্রামের বাসিন্দা ও বেগুনি রঙের ধানচাষী কৃষক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, প্রথমে ইউটিউবে ধানটি দেখি এবং দেখার পর ধানটি মনের কাছে ভালো লেগেছে। তারপর ধানটি অনলাইনে অর্ডার দিয়েছি। ২ কেজি ধান নিয়েছি তিনশ টাকা করে। তারপর বীজ করে জমিতে চারা লাগিয়েছি। ধানটা দেখতে ভালো রংটা বেগুনি। চাষাবাদ করতে ভালো লাগলো অন্য ধান থেকেও খরচ কম। এছাড়া ধানটির ফলন ভালো পেলে সামনের দিনে বাড়িয়ে ধানটি চাষ করবো ইনশা আল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, রাস্তায় যত লোকজনের সঙ্গে দেখা হচ্ছে সবাই ধানটির বিষয়ে অনেক প্রশ্ন করছেন। তারা জানতে চাচ্ছে ধানটি কেমন, আবাদ করতে কেমন লাগছে। তাদের আমি বলছি, অন্যান্য ধানের তুলনায় এটি আবাদে খরচ কম। অনেকে বীজ চাচ্ছে, তবে যতজন বীজ চাচ্ছে ততজনকে বীজ দিতে পারবো না। তাছাড়া যে হিসেবে খরচ করেছি সে হিসেবে ফলন ভালো পাবো বলে আশা করছি।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌরসভা ব্লকে নতুন ব্যতিক্রম ধরনের ধানের চাষ লক্ষ্য করেছি। রবিউল ইসলাম নামে একজন কৃষক সেটি চাষ করছেন। তিনি গাইবান্ধা থেকে বীজটি সংগ্রহ করেছেন। এই জাতের নাম দুলালি সুন্দরী বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেকে। কৃষক রবিউল ইসলাম আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নরমাল যেভাবে ধান চাষ করা হয় সেইভাবেই ধান চাষের পরামর্শ তাকে দিয়েছি। এর মধ্যেই এই জাতের ধানটি নিয়ে কৃষকদের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ধানটির পাতাগুলো বেগুনি কালার তবে ধানটি নরমাল ধানের মতোই হবে। বর্তমানে ধানের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে এটি উচ্চ ফলনশীল জাতের হবে। আমরা এটি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন যে বিজ্ঞানীরা আমরা তাদেরকেও অবহিত করেছি। এছাড়া আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি যদি এই ধানটির ফলন ভালো হয় এবং অন্যান্য পুষ্টি গুণাগুন যদি ঠিক থাকে এবং বর্তমান আবহাওয়ার সাথে উপযোগী হয়, তাহলে আমরা এই জাতটির সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ভবিষ্যতে কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের উপযোগী করবো।