নির্বাচনের দিনক্ষণ জানতে চাইবে বিএনপি

Slider রাজনীতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বিএনপি।

আগামীকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় বেলা ১২টায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কি, তা জানতে চাইবে বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেবে বিএনপি।

বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে জানান, আগামীকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আছে। প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় বেলা ১২টায় এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

ফরিদপুরের ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি গঠন

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবে। এই বৈঠকের জন্য সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা সফর কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে পূর্ব নির্ধারিত তারিখের দুই দিন আগে, অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু-কিছু উপদেষ্টা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। কেউ বলছেন— দেশের মানুষ বর্তমান সরকারকে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে বলছেন। আবার কেউ বলছেন— জুলাই অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা এই সরকারকে নির্বাচিত করেছে। তারা অনির্বাচিত নয়। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছেন। সবকিছু মিলিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আমরা কালকের বৈঠকে সেই ধোঁয়াশা দূর করার জন্য সরকারের কাছে আগামী নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইব। একই সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী ডিসেম্বরকে সামনে রেখে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হতে পারে। তবে, সেটা রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতবার আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম, তখন তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ডিসেম্বরের মধ্যে আগামী নির্বাচন করার জন্য তার সরকার সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। সেটা আমরা মেনেও নিয়েছিলাম।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কী চাইবে বিএনপি, জানালেন সালাহউদ্দিন

প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১৮ মাস সময় যথেষ্ট বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ওই বৈঠকের পর আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটা নির্দেশনা দেবেন। কিন্তু আমরা এর কোনও লক্ষণ দেখিনি। বরং আমরা দেখেছি নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

আগামী বৈঠকে বিএনপি মূলত নির্বাচন নিয়ে সরাসরি কথা বলতে যাচ্ছে উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করার প্রস্তাব থাকবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয় হচ্ছে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করবে। অর্থাৎ কীভাবে, কোন মাসে আগামী নির্বাচন হবে সেটা ঘোষণা করবে।

নির্বাচন পূর্ব রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু কার্যক্রম থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলছেন নির্বাচন হবে। এতে হবে বলা যায়, কিন্তু কবে হবে সেটা বলা যায় না। তাই নির্বাচনের দিনক্ষণ, মাস ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কোনও কিছু চূড়ান্ত নয়। এটা ঘোষণা হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু কাজ থাকে। প্রার্থী বাছাই করতে হয়, মনোনয়ন বোর্ড গঠন করতে হয়। সুতরাং দিনক্ষণের ঘোষণা না হলে এগুলো করা যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক সদস্য বলেন, বিএনপির দাবি থাকবে ডিসেম্বরের মধ্যে আগামী নির্বাচন করার। সেই অনুযায়ী রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরা হবে। তবে, সরকার আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন করতে চাইলেও বিএনপি আপত্তি জানাবে না। কিন্তু সেটার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে সরকারকে।

নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাব নিয়েও প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে আলোচনা করবে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, ইদানীং সরকারের পক্ষ থেকে ছোট সংস্কার-বড় সংস্কার নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আসলে তারা ছোট-বড় সংস্কার বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন, সেটি আমরা জানতে চাইব। একই সঙ্গে বিএনপি যে ঐকমত্য কমিশনের অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে একমত সেটি তুলে ধরা হবে। সরকারের যেসব বিষয়ে বিএনপি আংশিক কিংবা দ্বিমত করছে, তারও ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের আমলের সচিবদের পদোন্নতি দেওয়া নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরা হবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে। সার্বিকভাবে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে থাকা গায়েবি মামলা প্রত্যাহারসহ সরকারের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হবে।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অসংখ্য মিথ্যা মামলা ঝুলছে। এ বিষয়েও কোনও সুরাহা এখন পর্যন্ত হয়নি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ১১৯ কর্মকর্তাকে সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এই বিষয়গুলো জাতির কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। আমরা মূলত এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।’

প্রধান উপদেষ্টা ছোট-বড় সংস্কার বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিয়ে বিএনপি জানতে চাইবে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়া চালু থাকা অবস্থায় নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া যাবে না, এমন তো হতে পারে না।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এই সরকার তার মতো করে চলছে। তারা বলছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার অবস্থায় তারা নেই। ফলে, তারা নতুন অবস্থায় পুরাতন লোকদের, অর্থাৎ আওয়ামী লীগের লোকদের নিয়ে চলছে। আওয়ামী লীগের লোকদের কাজই ছিল মানুষকে হত্যা করা। সুতরাং নতুন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন একটা নির্বাচিত সরকার আসলে তারা এগুলো ঠিক করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *