গাজীপুরে নিহত কাসেমের বাড়িতে শোকের মাতম, জড়িতদের শাস্তি দাবি

Slider বাংলার মুখোমুখি

গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পাঁচ দিন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আবুল কাসেম (১৮) মারা গেছেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় তার বাড়িতে বইছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আবুল কাসেমের মৃত্যুর খবর মহানগরীর দক্ষিণ খাইলকৈর এলাকায় তার বাড়িতে পৌঁছলে সেখানে শুরু হয় শোকের মাতম।

নিহত কাসেম গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ খাইলকৈর এলাকার জামাল উদ্দিন চিশতির তৃতীয় স্ত্রীর ছেলে।

মৃত্যুর খবরে স্বজনদের আহাজারিতে পুরো পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা বাড়িতে এসে ভিড় জমাতে থাকেন। তারা কাশেম হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

স্থানীয়রা জানান, গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বোর্ডবাজার এলাকায় ছাত্রদের সাথে মিছিলে ছিলেন কাশেম। ছাত্ররা যেখানেই আন্দোলনের ডাক দিত সেখানেই চলে যেতেন তিনি। এমন একটি অসহায় এতিম ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আবুল কাসেম হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তার স্বজন ও এলাকাবাসী।

এদিকে দেশ ছেড়ে পলাতক জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় অভিযুক্ত সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার ভাংচুরের খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ভাংচুর ঠেকাতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন আবুল কাশেম (১৮)। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুতে দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহরের শিববাড়ি মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাসহ স্থানীয়রা। মিছিলটি শিববাড়ি মোড় থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় রাজবাড়ি সড়কে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। নিহত ছাত্র আবুল কাসেমের নামাজে জানাজা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুর রাজবাড়ি ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় বোর্ড বাজার সংলগ্ন আল হেরা সিএনজি পাম্পের মাঠে আরেকটি জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার ধীরাশ্রমের দাক্ষিণখান এলাকায় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে ঘটনাস্থলে গিয়ে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্তত ১৭ জন ছাত্র আহত হন।

খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখান থেকে গুরুতর আহত মো: কাশেমসহ সাতজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গাজীপুর জেলার আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) জিএমপির সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ২ শ’ থেকে ৩ শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *