বনভূমি উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা

Slider বাংলার মুখোমুখি


রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বনভূমি জবরদখলের মহোৎসব থেমে নেই। গত এক মাসে উপজেলায় বনের প্রায় ২৪ বিঘা জমি দখল হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় দখল করা এসব জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা। দখল করা বনভূমি উদ্ধারে গিয়ে হামলা ও মারধরের শিকার হচ্ছেন বনকর্মীরা।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে দখল করা বনভূমি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। জবরদখল করা বনভূমি উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান।

সরেজমিনে ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে শ্রীপুর রেঞ্জের সাতটি বিটে কমপক্ষে ২৪ বিঘা জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেটসহ নানা স্থাপনা। সবচেয়ে বেশি জবরদখল হয়েছে শ্রীপুর সদর, কাওরাইদ ও রাথুরা বিটে। এ ছাড়া গোসিঙ্গা, শিমলাপাড়া ও সিংড়াতলী বিটেও রেকর্ড পরিমাণ বনভূমি দখল করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাস্তা ঘেঁষে থাকা বনভূমির দামি জমি দখল করা হয়েছে। এসব জমিতে কোনো স্থাপনার কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে, আবার কোনোটির কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। জমি দখলের আগে বনের বিভিন্ন গাছপালা কেটে উজাড় করা হয়।

ভাওয়ালগড় বাঁচাও আন্দোলনের মহাসচিব রিপন আনসারী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বনভূমি জবরদখলের চিত্র দৃশ্যমান। বনভূমি রক্ষায় গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন বন কর্মকর্তারা। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বনভূমি জবরদখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অবৈধ দখলদারদের কারণে বনের মূল্যবান শাল, গজারিসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ নষ্ট হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে বন্য প্রাণীর বাসস্থান। বনভূমি রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

শ্রীপুর সদর বিট কর্মকর্তা মো. আলাল খান জানান, শ্রীপুর রেঞ্জের সদর বিটের কেওয়া এলাকায় বনভূমি জবরদখল হচ্ছে—গত ৯ আগস্ট এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে দখলকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে। পরে হামলা থেকে বাঁচতে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি।’

কাওরাইদ বিট কর্মকর্তা গণি শাহাদাত বলেন, ‘কাওরাইদ বিটের সবচেয়ে বেশি জবরদখল হচ্ছে নয়াপাড়া গ্রামের কাশেমপুর বাজার ও এর আশপাশে। এখানে জবরদখলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। আমরা ভয়ে তাঁদের নামও উচ্চারণ করতে পারছি না। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়ে দু-একটি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় হুমকির ওপর আছি।

শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী পরিচয় দিয়ে বনভূমি জবরদখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিট থেকে বনের শাল, গজারিগাছ কেটে বন উজাড় করছে। ইতিমধ্যে আমরা সব বিটের বনকর্মীদের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। অনেক জায়গায় হামলার শিকার হতে হচ্ছে। জবরদখল করা বনভূমি উদ্ধারে আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *