পরকীয়ার ঝড় সায়মার জীবনে

Slider নারী ও শিশু

91697_Untitled-6

 

 

 

পরিচয় মোবাইলফোনে। তারপর প্রেম। একপর্যায়ে বিয়ে। সেই বিয়েটাই এখন অসহ্য যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বামীর সঙ্গে আর একদিনও থাকার ইচ্ছে নেই তার। কাঁদতে কাঁদতেই জানালেন, এই বিয়েটা তার জীবনের একটা অভিশাপ। এ থেকে মুক্তি চান তিনি। বলছি সায়মা আক্তারের (ছদ্ধ নাম) কথা। ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। রাজধানীর ইব্রাহিমপুরের কাফরুলে থাকেন তিনি। মা-বাবা ও ভাইদের কাছে অত্যন্ত আদরের মেয়ে সায়মা। সায়মার সুখের জন্যই তার প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে দেন স্বজনরা। কিন্তু সুখ হয়নি তার। বিয়ের দুই বছর পরেই স্বামীর পরকীয়া তার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে।
স্কুল জীবনেই পরিচয় হয় প্রতিবেশী আসাদের (ছদ্ধ নাম) সঙ্গে। সায়মা তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সালটা ২০০৯। পরিচয় মোবাইলফোনে। আসাদ তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলো। সেদিন আসাদকে খারাপ লাগেনি সায়মার। দুজনের গ্রামের বাড়িই বরিশালে। তাছাড়া আসাদের চেহারা দেখতেও খারাপ না। সাত-পাঁচ না ভেবেই তার প্রেমে পড়ে যান সায়মা। ছুটিয়ে প্রেম করেছেন তারা। সায়মাকে খুশি রাখতে ব্যস্ত আসাদ। সায়মার কোন সমস্যা হলে আর কথা নেই। সায়মার ভাষায়, মনে হতো আমি ব্যাথা পেলে কষ্ট হতো আসাদের। আসাদ তখন লেখাপড়া ছাড়া প্রায়। তিন বছর এভাবে প্রেম করার পর বিয়ে হয় আসাদ-সায়মার। পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের না জানিয়েই বিয়ে করেন তারা। সায়মার পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা কোনভাবেই চাননি এই ছেলের সঙ্গে সায়মার বিয়ে হোক। কিন্তু সায়মার চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে গিয়েই একসময় বিয়েটা মেনে নেন তারা। সায়মার উৎসাহেই সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে বিবিএতে ভর্তি হন আসাদ। সংসার ও আসাদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করতেন সায়মার মা-ভাই। এমনকি আসাদকে নগদ ১ লাখ টাকা দেন তার মা। সেইসঙ্গে দেওয়া বাসা সাজানোর আসবাবপত্র, পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। এতোকিছুর পরও আসাদের মন জয়ে ব্যর্থ হন তারা। বিয়ের পরেই অন্য এক আসাদকে আবিষ্কার করেন সায়মা।
২০১৩ সাল। কেমন যেন বদলে যাচ্ছে আসাদ। প্রায়ই অন্যমনস্ক। সকালে বের হলে কখন ফিরে তার কোন ঠিক নেই। মোবাইলফোনে কল এলে কথা বলার জন্য বাসার বাইরে চলে যায়। বাইরে থাকাকালীন তার ফোনে কল দিলে প্রায়ই দীর্ঘ সময় ব্যস্ত পান সায়মা। তবু আসাদকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেন না তিনি। এক বিকালে জানতে চেয়েছিলেন, ফোন এতো ব্যস্ত ছিলো, কার সঙ্গে কথা বলছিলে? পাল্টা প্রশ্ন করে আসাদ- তুমি কি আমাকে সন্দেহ করো? সায়মা জানান, তিনি কখনই সন্দেহ করেন না। অথচ আশপাশের অনেকের জানা হয়ে গেছে আসাদ পরকীয়ায় মজেছেন।
কাফরুলের ইব্রাহিমপুরে বাসার পাশেই একটি পার্লার। ওই পার্লারে কাজ করেন আসমা (ছদ্ধ নাম) নামের এক মেয়ে। ওই মেয়ের প্রেমে পড়ে যান আসাদ। স্ত্রী সায়মার চোখে ফাঁকি দিয়ে আসমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্নস্থানে। লোকমুখে বিষয়টি জানার পরও বিশ্বাস করেননি সায়মা। যুমনা ফিউচার পার্কের সামনে স্বামী আসাদ ও আসমাকে দেখলেন নিজ চোখেই। একই রিক্সায়। অন্তরঙ্গ অবস্থান দুজনের। রাস্তার এক পাশ থেকে তাকাতেই রিক্সাটা আড়াল হয়ে গেলো। নিজের চোখকে তখন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সায়মা। এটা কি সম্ভব? তার ভালোবাসার মানুষটি এমন করতে পারে! আসাদ বাসায় ফেরার পর দুজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। ক্ষুব্ধ হন আসাদ। মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতে চান সব। কিন্তু সায়মা যে প্রত্যক্ষদর্শী। তাই ফেঁসে যান তিনি। এভাবে কেটে যায় বেশ কিছু দিন। সায়মার সরল বিশ্বাস স্বামী আসাদ আর ভুল করবে না। নিশ্চয়ই অনুতপ্ত হয়েছে। সায়মার এই ধারণা ভুল। অন্য রুপ ধারণ করে আসাদ। দেশের বাইরে যেতে চান তিনি। এজন্য সায়মার সহযোগিতা চান। সায়মাকে চাপ দেন তার মা-ভাইদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা এনে দিতে। সায়মা অপারগতা প্রকাশ করেন। এবার এই টাকার দাবিতে শুরু হয় বাকবিতন্ডা থেকে মারধর। সায়মা জানান, গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি সকালে মারধর করে তাকে বাসা থেকে বের করে দেন আসাদ। স্বামীর মারধরে আহত হয়ে চিকিৎসা নেন হাসপাতালে। তারপর থেকে দুজন দুটি পথে। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গেই যুদ্ধ করতে হচ্ছে এখন সায়মাকে। কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়রি থেকে মামলা পর্যন্ত করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। গত ২রা আগস্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ মামলা করেন সায়মা। সালমা অভিযোগ করেন, পরকীয়ায় বাধা দেওয়ার কারণেই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা হয় তাকে। ভালোবাসার মানুষটি এভাবে বদলে যেতে পারে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সালমার।
এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, টেলিভিশনের বিভিন্ন সিরিয়াল, বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাবের কারণে অনেকেই পরকীয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করছেন। কিন্তু এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে একটি পরিবার। পরকীয়া পরিবারকে ভেঙে দেয়। সঙ্গী ও সন্তানদের জীবন বিষিয়ে তোলে। যা বাঙালি সমাজে কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। পরকীয়ার ক্ষেত্রে বেকার স্বামী, স্ত্রীরা সহজেই প্রভাবিত হন। তাই কর্মহীন থাকা যেমন উচিত না, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালোবাসা থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *