রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা এক কিশোরের লাশ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। (১৪ মে) মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
সকালে কিশোরের বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে শ্রীপুর পৌরসভার সবুজবাগ এলাকায় একটি বনের ভেতর অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয় স্থানীয়রা। সেখানে ভর্তির দুই ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরদিন গতকাল সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় সে।
কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেননি কর্তব্যরত চিকিৎসক। তবে স্বজনদের ধারণা, গত রোববার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে সে চেতনানাশক খেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে।
নিহত মাহমুদ হাসান (১৬) উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের ফাওগান গ্রামের আজিজুল বেপারীর ছেলে। সে স্থানীয় ফাওগান উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়েছে।
নিহতের চাচা আসলাম বেপারি বলেন, গতকাল সোমবার সকাল সে বাড়ি থেকে স্বাভাবিকভাবে বের হয়। রাত হলেও সে বাড়ি আসেনি। এরপর নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশী ও তার বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাইনি। আজ মঙ্গলবার সকালে থানায় জিডি করতে প্রস্তুতি নেই। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত হাসপাতালে এসে মরদেহ দেখতে পায়। আমরা ধারণা করছি, এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে অভিমান করে সে কোনো কিছু সেবন করে মারা গেছে।
নিহতের বাবা আজিজুল বেপারী বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ার পর আমি ও স্ত্রী ছেলেকে কোনো ধরনের বকাঝকা এমনকি কোনো ধরনের চাপ দেয়নি। কিন্তু কী কারণে সে মারা গেল বলতে পারছি না। বাড়ি থেকে এত দূরে সে কীভাবে গেল, কী খেল কীভাবে মারা গেলে, কেন মারা গেল কোনো কিছুই বলতে পারছি না।
আজিজুল বেপারী আরও বলেন, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ছাড়া আর কোনো কারণ নেই। ধারণা করছি, এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে সে আত্মহত্যা করেছে।
ফাওগান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল রহমান বলেন, মাহমুদ হাসান ২০১৪ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত রোববার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। তাতে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয় সে।
প্রহলাদপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন,গতকাল সোমবার থেকে নিখোঁজ হয় মাহমুদ হাসান। এ বিষয়টি তার বাবা আমাকে জানায়। আমি তার বাবাকে থানায় অবহিত করতে পরামর্শ দেয়। আজ দুপুরে শ্রীপুর পুলিশ আমাকে ফোন করে জানালে তার বাবাকে বিষয়টি জানায়। এরপর তার মা, বাবা ও চাচারা হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জারিন রাফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মাহমুদ হাসান নামে এক কিশোরকে অজ্ঞান অবস্থায় তাজউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল, কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।