ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেশের ৫৯ জেলার ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ বুধবার। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে।
১৩৯টি উপজেলা পরিষদে প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় ১৬০০ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় এই পর্বে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে দুই কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ।
সমতল এলাকাগুলোর প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১৭-১৯ সদস্যের নিরাপত্তা দল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অতি দুর্গম এলাকার প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১৯-২১ সদস্যের নিরাপত্তা দল ভোট চলাকালে দায়িত্ব পালন করবে।
মঙ্গলবার (৭ মে) সকাল থেকেই বিভিন্ন নির্বাচন অফিস থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয় এবং দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে যায়। তবে, বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে আজ সকালে।
আর উপজেলা ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে চার ধাপে। প্রথম ধাপে ভোট বুধবার। এরই মধ্যে প্রথম ধাপে পাঁচ উপজেলার প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সকাল থেকেই বরিশালের বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো শুরু হয় ভোটের সরঞ্জাম। সদর উপজেলা চত্বর থেকে ৬৮টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার বাদে বাকি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আমীর খসরু গাজী।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার ভোট হচ্ছে প্রথম ধাপে। সেখানেও ব্যালট পেপার বাদে বাকি সব সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মনির হোসেন। তবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলায় বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে ভোট হবে পরে।
নারায়ণগঞ্জে দুপুরের ভেতর পাঁচটি ইউনিয়নে ভোটের সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। যশোরের দুই উপজেলায় নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানোর পর ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
নদী বিধৌত জেলা চাঁদপুরে উপজেলা নির্বাচন ঘিরে কোস্ট গার্ডের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট তাকিউল আহসান। এছাড়া, ঝিনাইদহ, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ভোটের সরঞ্জাম।
এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সহনীয় আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার বন্ধ করতে কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। নির্বাচনের দিন যেনো কোনো অনিয়ম না হয়, সেজন্য প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভোট প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের থেকে উপজেলা নির্বাচনের ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে।
এর আগে গত ২১ মার্চ প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
তবে নোয়াখালীর হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, ফেনীর পরশুরাম ও মাদারীপুরের শিবচর এই পাঁচটি উপজেলার প্রার্থীরা এরইমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন কারণবশত আটটি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত উপজেলাগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ সদর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, নওগাঁর মহাদেবপুর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও জামালপুরের সরিষাবাড়ী।
এবার চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ৪৮০টি উপজেলায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে কমিশন।
২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৬০টি উপজেলায়, ২৯ মে তৃতীয় ধাপে ১১০ উপজেলায় এবং ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫০টির বেশি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে।