শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে পারবেন তো রোহিত শর্মা? পারবেন কি এনে দিতে ভারতকে ফের বিশ্বকাপ শিরোপা? পারবেন কি গত এক যুগের গেরো কাটতে! পারবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবে পারার খুব কাছেই আছেন তিনি। আজ রোববার আহমেদাবাদে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই মাঠে নামবে তার দল।
প্রশ্নের উত্তর পেতে বাকি মাত্র একটা ধাপ। বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ফাইনালে জয় পেলেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে। পরম আরাধ্যের বিশ্বকাপ শিরোপায় চুমু আঁকবে। তবে পথটা অতোটা সহজ নয়, ছেড়ে কথা বলবে না অস্ট্রেলিয়া। ঐতিহ্য সম্বলিত এই দল বরাবরই ভারতের জন্যে ভয়ের কারণ।
ঘরের মাঠে দেড়লাখ সমর্থকের সামনে ভারত চাপে থাকলেও অজিরা চাপহীন, নির্ভার, নিরুদ্বিগ্ন। নেই বাড়তি প্রত্যাশা। কেননা এর আগেও এই শিরোপা পাঁচ-পাঁচবার ঘরে তুলেছে তারা। আজ মাঠে নেমেছে ষষ্ঠ শিরোপার লোভে। এর আহে শেষবার শিরোপার স্বাদ মিলেছে এক আসর আগে, ২০১৫ আসরে।
বিপরীতে এবার শিরোপা জেতাই চাই ভারতের। গত ১২টি বছর ধরে আরো একবার বিশ্ব সেরা হবার অপেক্ষায় বুক বেঁধে আছে তারা। এই সময়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপ শিরোপা জিতেও মন ভরেনি তাদের, তাদের চাই বিশ্বকাপ শিরোপা। গত আসরেও শিরোপার খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল দলটি, তবে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে সেবার স্বপ্ন ভাঙে।
এবার অবশ্য বেশ ভালো অবস্থানেই আছে ভারত। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের সুবিধা তো আছেই, দলও আছে ছন্দে। বড় সব রাঘববোয়াল বধ করেই ফাইনালে পা রেখেছে তারা। আসরে এখন পর্যন্ত হারেনি কোনো ম্যাচে। অপরাজিত থেকেই উঠে এসেছে ফাইনালে। ২০১১ সালের পর প্রথম এশিয়ান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে ভারত।
ভারতের এবার শক্তির জায়গা সবটাই। দুর্বলতা এখনো তেমন চোখে পড়েনি। ব্যাট হাতে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা যেভাবে টানছেন দলকে, বল হাতে মোহাম্মদ শামিও দিচ্ছেন আস্থার প্রতিদান। তিনজনেই আছেন সেরাদের তালিকার শীর্ষে, আছেন টুর্নামেন্ট হবার দৌড়েও।
অস্ট্রেলিয়া দলটাও বেশ ভারসাম্য। নিজেদের মাঝে বুঝাপড়াটা যথেষ্ট ভালো সবার মাঝে। তাছাড়া ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, এডাম জাম্পারাও আলো কাড়ছেন আসনজুড়ে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও ঝড় হয়ে দেখা দিয়েছেন দলের প্রয়োজনে। লিগ পর্বে খুব একটা ভীতি ছড়াতে না পারলেও সেমিফাইনালে জ্বলে উঠেন স্টার্ক- হ্যাজলউডরা।
আসরে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল নিজেদের প্রথম ম্যাচেই। লিগ পর্বে খেলতে নেমেছিল উভয়ে। যেখানে অস্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করেই বিশ্বকাপ শুরু করে ভারত। চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১৯৯ রানে আটকে দিয়ে ভারত লক্ষ্য পেরিয়ে যায় ৬ উইকেট আর ৫২ বল হাতে রেখে।
ভারত অপরাজিত থেকেই ফাইনালে এলেও, অস্ট্রেলিয়াও ছেড়ে কথা বলেনি। আসরে টানা আটজয় তাদের। যদিও জোড়া জারে আসর শুরু করেছিল অজিরা। হারের ধরন ছিল দৃষ্টিকটু। ফলে অনেকেই ভাবতে শুরু করে, আসরটা খুব একটা ভালো যাবে না প্যাট কামিন্সদের।
তবে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। পরের সাত ম্যাচের সবগুলোতে জয় নিয়েই নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল। আর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩ উইকেটে হারায় অজিরা। যেখানে ভারত হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে।
মুখোমুখি দেখায় শেষ ১০ ম্যাচে সমান জয় ভারত ও অস্ট্রেলয়ার। উভয় দল জয় পেয়েছে সমান ৫টি করে ম্যাচে। তবে আজ উভয় দল নামবে নিজেদের ১৫১ তম ম্যাচে। আগের ১৬০ ম্যাচে অবশ্য আধিপত্য অস্ট্রেলিয়ারই। ৮৩ ম্যাচেই বিজয়ী হাসি হেসেছে হলুদ দলটা৷ ভারত জিতেছে ৫৭ ম্যাচে। ফলাফল আসেনি ৯ বার।
এমনকি ভারতের মাটিতেও ভারতের সাথে সমান ভারসাম্য ধরে রেখেছে অস্ট্রেলিয়ার। ৭১ বারের দেখায় ৩৩ বার হেসেছে অস্ট্রেলিয়া, ৩৩ জয় ভারতের। ফলাফল আসেনি ৫ ম্যাচে।
তবে ক্রিকেটে প্রচলিত আছে, পরিসংখ্যান ম্যাচ জেতায় না। আর অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের এমন সমানে সমান লড়াই দেখে মনে হচ্ছে, পরিসংখ্যান এখানে কেবল সংখ্যা।