অবরুদ্ধ গাজার স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত একটি স্কুলে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে।
গাজার সিটিতে একটি অ্যাম্বুলেন্স বহরে শুক্রবার ইসরাইলি হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
ইসরাইল এ হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, তবে তারা হামাসকে লক্ষ্য করে হামলা করেছিল।
জাতিসঙ্ঘের স্কুলে হামলায় নিহতদের অধিকাংশই নারী-শিশু
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, গাজায় জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলে ইসরাইলি হামলায় নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
তিনি জানান, আল-ফাকুরা স্কুলের এ হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে এবং ৫৬ জন আহত হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গাজায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায়ই ২৩১ জন নিহত হয়েছে।
‘ওই স্কুলে হামলায় সেখানে অবস্থান নেয়া ব্যক্তিদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যান। তাদের ছিন্নভিন্ন লাশ পলিথিনে করে সংগ্রহ করতে হয়,’ বলেন ওই মুখপাত্র।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলি বিমান হামলা শুরুর পর থেকে অন্তত ৯ হাজার ৪৮৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৯০০ শিশু।
ওই কক্ষে ছিল শুধু নারী ও শিশু : বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি
আল-ফাকুরা স্কুলের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া একজন কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা স্কুলের ভেতরেই বোমা হামলার শিকার হয়েছি। আমাদের সাথে শিশুরা ছিল। বোমা হামলার পর থেকে তারা আর খাচ্ছে না।’
উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের ওই স্কুলটিতে হাজারো উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘আমার পরিবারের চারজন হতাহত হয়েছে। কিন্তু হামাসের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
তবে ওই হামলায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা।
গাজাজুড়ে অব্যাহত হামলার মধ্যে জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে এটি তৃতীয় বড় ইসরাইলি হামলা।
এদিকে, গাজার বড় হাসপাতাল আল-সিফায় ৪০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু স্কুল, মসজিদ, গীর্জা ও হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্য করে ইসরাইল যেভাবে হামলা চালাচ্ছে তাতে এ লোকগুলো যেকোনো সময় হতাহতের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিদ্যুতের একমাত্র মাধ্যম সোলার প্যানেলগুলোও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে ইসরাইল
ইসরাইলি হামলা শুরুর পর থেকে সোলার প্যানেল ও জেনারেটরই গাজাবাসীর বিদ্যুতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু সে সোলার প্যানেলগুলোকেও লক্ষ্য করে এখন ইসরাইলের হামলা চালাচ্ছে।
হিন্দ কুদারি নামে গাজার এক সাংবাদিক আলজাজিরাকে বলেন, ‘সর্বশেষ বিমান হামলায় ইসরাইল গাজার সোলার প্যানেল ও জেনারেটরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।’
‘আমি নিজ চোখে দেখেছি, ভবনগুলোর ছাদে স্থাপন করা সোলার প্যানেলগুলোকে লক্ষ্য করেই কয়েকবার হামলা চালিয়েছে ইসরাইল,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এটাই গাজাবাসীর জন্য এখন একমাত্র বিদ্যুতের উৎস। এর দ্বারাই এখানকার জনগণ তাদের ফোনে চার্জ দিতে পারছে এবং এর বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে।’
আরো দুটি মসজিদ ধ্বংস
তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ইসরাইলি হামলায় দক্ষিণ গাজার আরো দুটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে।
আল-সাবরার পার্শ্ববর্তী আলি বিন আবি তালিব ও আল-ইস্তিজাবাহ মসজিদ দু’টি বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে ইসরাইল।
সূত্র : আলজাজিরা