গাজীপুর: কেও ফূল তুলছে। কেও কেও বৈঠা নিয়ে নৌকা বাইছে। কেও চারপাশের দৃশ্য দেখছে। আবার কারও ইচ্ছে জেলেদের কাছ থেকেকিছু মাছ কিনতে। সব মিলে একটা আনন্দঘন পরিবেশ গাজীপুরের পাঁচুয়া গ্রামের শাপলা বিলে।
পাঁচুয়া গ্রামের এ বিলকে লোক মুখের শাপলা বিল বলতে শোনা যায়।কাছাকাছি রয়েছে আরো দুইটা বিল।সড়ো বিল ও হড়ো বিল।আবার অনেকে বিলের নাম বলে নরাইট বিল। তবে শাপলা বিল নামেই ব্যপক পরিচিতি।
বিলে ফুল ফুটতে শুরু করে বর্ষা শুরু কয়েকমাস পর। আর শেষ হয় শীতের মাঝামাঝি।খুব ভোরে আসলে শাপলা ফুল দেখা যায়। সূর্য় উঠলে আস্তে আস্তে ফুল নিভে যায়।মানুষের আনাগোনাও কমে যায়।
বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের পূণ্য ভুমি রায়েদ ইউনিয়নের আমরাইদ বাজারে এসে থামতে হয়। তার পরেই জলপাইতলা নামক স্থান।সেখান থেকে যেতে হয় কাপাসিয়ার উত্তরাঞ্চলের একেবারে শেষ অংশে টোক ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে। পাঁচুয়া গ্রাম জুড়ে এটা বিস্তৃত। নরাইট বিলের ৯টি গোপ রয়েছে।আর আলাদা আলাদা ৯টি গোপের সমন্বয়ে বিস্তৃতি হয়েছে নরাইট বিল।
ছোট্ট এই গ্রাম এখন ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রবিন্দু।বছরের এ সময়ে যারা ঢাকার আশেপাশে থাকেন,ছুটে আসেন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।পুরো বিলজুড়ে লাল শাপলার রাজত্ব।বিলের চারপাশে গাছগাছালি পাখপাখালি।রয়েছে আমগাছের শীতল হাওয়া।
ঢাকা থেকে আগত ব্যাংক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, সময় পেলেই চলে আসি শাপলা বিলে।বন্ধুদের নিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি প্রকৃতির টানে।দীর্ঘদিন ধরেই ইচ্ছা লাল শাপলার বিলে ঘুরতে আসবো।শাপলা নিয়ে ছবি তুলবো।সে আশা পূরণ হয়েছে।এত কাছাকাছি এত সুন্দর স্থান তা জানা ছিল না।
লোহাদী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থী আল আমীন জানান, ডানাসহ অনেক গুলো ফুল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। পড়াশুনা সব সময় ভালো লাগেনা। আজকে ফুল তুলতে,সাঁতার কাঁটতে অনেক ভালো লেগেছে।অনেকের মতো আরো ঘুরতে এসেছেন গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভূবনের চালা গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান এরশাদ। এসেছেন স্থানীয় বঙ্গতাজ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাঈম ও কিশোর মো. মাসুম।
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম জানান, গাঢ় সবুজের বুকে এ যেন বাংলার ‘লাল স্বর্গ’। বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলা বেশি।বিলের যত ভেতরে চোখ যায় ততই লালের আধিক্য।
জানা গেছে,বিল থেকে শাপলা ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে স্থানীয়রা।পাঁচুয়া ও ভিকারটেক এলাকার শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানকার কেউ কেউ বিলের শাপলা ফুলের ওপর নির্ভরশীল। কেউ শাপলা তোলেন, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করেন,কেও মাছ বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জানা যায়,শাপলায় আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি। শাপলা চর্ম ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী।গ্রামের মতো শহরেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সহজলভ্য শাপলা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
শাপলা বিলের অপার সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে চাইলে স্থানীয়দের কাছ থেকে ছোট নৌকা ভাড়া করা যায়। বিলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে আত্মতৃপ্তি অনুভূত হবে।বক, মাছরাঙাসহ নানা জাতের পাখি এসে বিলের মাঝে কিচিরমিচির করে।
কাপাসিয়া উপজেলায় সেরা প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত আফরুজা সুলতানা জানান, আমি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শাপলা বিলের অনেক গল্প শুনেছি।ওরা ক্লাসে বিষয়গুলো নিয়ে দারুণ শিক্ষনীয় আলোচনায় মেতে উঠে। কেও বলে সাঁতার কেটেছে,কেও বলে ফুল ফুটতে ও নিভতে দেখেছে।কেও আবার আত্বতৃপ্তির কথা বলে।
কাপাসিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খাঁন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা শাপালা বিলের সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।প্রতি বর্ষা থেকে শীত পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।নারী ও শিশুরা যাতে দুর্ঘটনার শিকার নয় সে ব্যবস্থা করা হবে।এ বিষয়ে গ্রামবাসীর সহযোগিতা দরকার।