গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বাসায় তল্লাশি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে ফেসবুক থেকে লাইভে এসে অভিযোগ করেন নুর। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘রাত ২টার দিকে সিসিটিভিতে দেখলাম নিচে আমার গাড়ির কাছে তিন/চারজন ঘুরঘুর করছে। তখন আমি ভেবেছি কেউ হয়তো গাড়ির চাকা বা স্ক্রু ঢিলা করতে এসেছে, যাতে পরে আমি গাড়ি চালালে অ্যাক্সিডেন্ট হই। পরে দেখি তারা উপরে উঠে আসছে। রাত তখন ২টা ১০ হবে। যখন দরজা নক করলো আমি বলেছি- আপনারা কারা? তারা বলেছে যে, ডিবির লোক।’
নুর বলেন, ‘এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরেই নানা ধরনের হুমকি ধামকি পাচ্ছি, সেজন্য আমি বলেছি- আপনাদের তো কারও কোনো ইউনিফর্ম নেই। আমি এখন কাউকে ঢুকতে দেব না, আপনারা সকালে আসেন। তারা অনেক সময় কলিং বেল বাজিয়েছে। তখন আমি বলেছি, আমার বাসায় ছোট দুটা বাচ্চা আছে, একজনের বয়স দুই মাস, আরেকজনের বয়স সাড়ে তিন বছর। আমার শশুর-শাশুড়ি আজ হজ থেকে এসেছেন, মুরব্বিরা আছেন, আপনারা এভাবে কেন কলিং বেল বাজাচ্ছেন? তখন তারা বলেছে, ‘বাসা না খুললে আমরা ভেঙে ঢুকব।’ তখন বলেছি, ওকে আমার বাসা, আমি এই রাতে কাউকে ঢুকতে দেব না, কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া আপনারা যদি ভেঙে ঢোকেন তাহলে ঢুকতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা প্রথমে দুটি দরজা ভেঙে রুমের মধ্যে ঢোকেন। আরেকটা রুম, যেটা ভেতর থেকে লক হয়ে গেছে, সেই রুমও তারা ভেঙে ঢুকল। কিছু সময় পরে একজন ঢুকলেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি এই অঞ্চলের ডিসি। তখন আমি বলেছি- ‘এখানে মদ খেয়ে কেন এসেছেন? এখানে অ্যালকোহলের গন্ধ আসতেছে।’ তখন তারা বলে যে, ‘না এখানে কেউ মদ খেয়ে আসেনি।’ ওই ডিসি বললেন, ‘এ বাসায় জঙ্গি আছে। জঙ্গি ধরতে এসেছি।’ আমি বললাম, ‘জঙ্গি কে?’ আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ইয়ামিনকে দেখিয়ে বলে, ‘সে জঙ্গি।’’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘আমি বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে পড়ে, আমার সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি। সে যদি জঙ্গি হয় আমি হচ্ছি সেই জঙ্গির নেতা। আমাকেও নিয়ে চলেন, আমিও যাব। ওকে চিলের মতো ধরে চড়-থাপ্পড় দিতে দিতে সিঁড়ি দিয়ে বের করলেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে একজন এডিসি ছিলেন। তিনি আমার স্ত্রী ও শাশুড়ির সামনে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন সেগুলো উচ্চারণ করার মতো না।’
নুর বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা যখন সরকার পতন আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ তখনই প্রশাসন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমাদের জঙ্গি, জামায়াত শিবির বানিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে হুমকি।’
তিনি বলেন, ‘বুয়েটের ২৪ জন ছাত্রসহ ৩৪ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বুধবার বিকেলে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সেই আন্দোলনকে প্রভাবিত করতেই রাতের অন্ধকারে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে গেছেন তারা।’
উল্লেখ্য, এর আগে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানকে সাদা পোশাকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। রাত ৮টায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার বাবা রফিকুল মোল্লাকেও তুলে নিয়ে যায়। তবে ভোরে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।