ঢাকা: নিউইয়র্কের একটি একাডেমিক আলোচনা সভায় দেওয়া তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে লেখক-কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন, তার বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক মৌলবাদী দল রাজনৈতিক পুঁজি করেছে এবং মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে।
‘আমি তাদের চাইতে অনেক বড় মুসলমান’ বলে উল্লেখ করে এভাবে যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মের অবমাননা করছেন তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৬ জুলাই) নিউইয়র্কে একটি প্রেসনোট বিতরণ করে তার বক্তব্যের বিষয়ে এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
প্রেসনোটে একুশের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন, ‘গত ৩ জুলাই নিউইয়র্কে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি একটি একাডেমিক আলোচনা সভায়, সেটাকে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক মৌলবাদী দল রাজনৈতিক পুঁজি করেছে এবং মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। তারা বলেছে যে, আমি ধর্মবিরোধী রাসুল, ইসলাম এমনকি আল্লাহর অবমাননা করেছি। কোনো সাধারণ মানুষের আল্লাহকে অবমাননা করার শক্তি আছে? এটা প্রচার করাও ধর্মদ্রোহিতা এবং এ তথাকথিত ইসলামপন্থীরা এটাই প্রচার করছে। আমি নিজে মাত্র গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওমরাহ করেছি। সেই ব্যক্তি নিউইয়র্কে এসে ধর্মদ্রোহিতা করবে কি কারণে?’
‘আমার যারা নিন্দা করছেন তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, তারা আমার বক্তব্যটা সম্পূর্ণ পড়ুন। তারপর যদি মনে করেন যে, আমি ধর্ম, আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে কিছু বলেছি, তখন তার শাস্তি বিধান করেন। কিন্তু এর আগে বিনা বিচারে একশ্রেণির মোল্লার উস্কানিতে, রাজনৈতিক উদ্দেশে তারা যা করছেন এটার নিন্দা করার ভাষা আমার জানা নেই। তারা আমাকে ছোট করেননি, তারা ধর্মকে, আল্লাহর রাসুলকেই ছোট করছেন’।
গাফফার চৌধুরী তার প্রেসনোটে আরও বলেন, ‘আমি আল্লাহর ৯৯ নাম সম্পর্কে দেবতাদের নাম বলিনি। আমি বলেছি, কালচারাল এসিমিলেশন কিভাবে প্রত্যেকটি সভ্যতা, এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতা উপকরণ গ্রহণ করে। বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা বলা হয়। এটা যে সত্য না এটা প্রমাণ করার জন্য বলেছিলাম যে, আরবি ভাষাও ছিল এককালীন কাফেরদের ভাষা। এটা বলা কি আরবি ভাষার অবমাননা?’
‘তারপর বলেছি যে, আল্লাহর গুণাত্মক নামগুলো আগে কাফেরদের দেবতাদেরও ছিল। তা না হলে রাসুলুল্লাহর পিতার নাম আবদুল্লাহ কি করে হয়? এটা তো আর মুসলমান নাম নয়। সেখানে আল্লাহ আছে, সে আল্লাহ ছিল কাবা শরিফের কাবার প্রতিষ্ঠিত মূর্তিগুলোর ভেতরে প্রধান মূর্তির নাম। অবশ্য কেউ কেউ এটাকে ইলাহ বলেন, ইলাহ থেকে আল্লাহ শব্দের উৎপত্তি। এভাবে আল্লাহর রাসুল আরবের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেটা ধর্মবিরোধী নয় সেটাকে তিনি গ্রহণ করেছেন’।
‘এমনকি হজও ইসলামের হজ নয়, এটাও সেই দু’হাজার তিন হাজার বছর আগের কাফেরদের দ্বারা প্রবর্তিত হজ, তিনি সেখানে এক ঈশ্বর বার্তাটি যুক্ত করেছেন। এটাই আমি বলেছি যে, এটা হচ্ছে একাডেমিক আলোচনা এবং আমি সাহাবাদের সম্পর্কে কোনো কটূক্তিই করিনি’।
‘আমি বলেছি যে, আমরা আরবি ভাষা না জেনে, আরবিতে সন্তানদের নামকরণ করি, সেটা ভুল। আমাদের নামকরণটার অর্থ জানা উচিত। যেমন আবু হোরায়রা। এটা রাসুলুল্লাহর সাহাবার প্রকৃত নাম নয়। রাসুলুল্লাহ তাকে ঠাট্টা করে বিড়ালের বাবা ডাকতেন। এখন আমরা যেহেতু আরবি জানি না, সেই বিড়ালের বাবার নামটা আমরা রাখি। যার কাশেম বলে কোনো ছেলে নাই তিনি তার ছেলের নাম রাখেন আবুল কাশেম। এভাবে আরবি ভাষা না জানার জন্য অনেক বিভ্রান্তি হয় আমাদের দেশে’।
তিনি বলেন, ‘মোজাক্কার মোয়ান্নাস বুঝতে পারি না আরবের। সেজন্য আমরা স্ত্রীলোকের নাম রাখি, তারও উদাহরণ দিয়েছি। তারপর আবার রাসুল শব্দকে মনে করি, রাসুল বললেই বুঝি আমাদের রাসুলুল্লাহকে অবমাননা করা হয়’।
‘অথচ পন্ডিত নেহেরু যখন সৌদি আরবে যান তখন তাকে বলা হয়েছিল মারহাবা ইয়া রাসুলে সালাম, ‘হে শান্তির দূত তোমাকে সংবর্ধনা জানাই’। অথচ বাংলাদেশে গিয়ে যদি কেউ বলেন, রাসুল মানে অ্যাম্বাসেডর তাকে মুরতাদ বলা হবে’।
আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘এই যারা আজকে মুরতাদ বলছেন তারা প্রত্যেকটিরই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আজকে তারা ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মের অবমাননা করছেন। আমি তাদের শাস্তি চাই। যারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন, বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, তারা পরবর্তীকালে সবরকম মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ইসলামের নাম করে ব্যবসা করছেন, ব্যাংক করছেন, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি করছেন এবং আজকে যারা এই ধর্মকে আবার রাজনৈতিক পুঁজি করেছেন, তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি তাদের চাইতে অনেক বড় মুসলমান’।