ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনবিষয়ক প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের মধ্যেই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের এক দফা দাবির ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা। আগামী ১২ জুলাই বুধবার যুগপৎভাবে এই এক দফা ঘোষণা করা হবে। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল ‘শান্তিপূর্ণ শোডাউন’ করে এক দফা ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটি ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের জেলাগুলোকে সমাবেশে সর্বোচ্চ সমাগম ঘটানোর নির্দেশনা দিয়েছে। ঢাকায় মাইকিং করে জনগণকেও সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধিদলও ঢাকা সফরে আসছে। বিদেশীদের এই সফরের সময়ে শুধু এক দফার ঘোষণা নয়, আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচি পালনের সূচনাও করতে চায় বিএনপি ও তাদের শরিকরা। ফলে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় বড় একাধিক কর্মসূচি দিতে পারে দলটি। বিএনপি এর মধ্য দিয়ে বিদেশী প্রতিনিধিদের কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে চায় যে, এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে ৩৬টি দল চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে নেমেছে। দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নির্দলীয় সরকারেরও কোনো বিকল্প নেই।
জানা গেছে, বিএনপির মূল টার্গেট এবার রাজধানী ঢাকা। তাই এবার প্রথম কর্মসূচিও হবে শক্ত এবং তা হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে ঘেরাও, অবস্থানসহ একাধিক শক্ত কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে জনগণকে ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করাই হবে বিএনপির লক্ষ্য। গত শনিবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বৈঠকে যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়টি আবারো আলোচনা হতে পারে। বেলা ৩টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকবেন। এলডিপি ও লেবার পার্টির সাথেও সন্ধ্যার পর এ নিয়ে বৈঠক হবে।
এ দিকে ঢাকার ওই সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিগত নির্বাচনে ঢাকা বিভাগের অধীন প্রতিটি সংসদীয় আসনে ধানের শীষের প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রথম দু’জন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। সেখানে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ঢাকার সমাবেশে সর্বোচ্চ লোকসমাগমের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল রোববার বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মহানগরের প্রতিটি থানাকে সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ঘটানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির প্রস্তুতি ভালো। সেখানে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকবে। এ ছাড়া আশা করছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষও সমাবেশে উপস্থিত হবেন। কারণ, এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ ও জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ।
সমাবেশের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের নেতারা সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আজ থেকে ঢাকায় মাইকিং করা হবে।
এ দিকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক অনেক দল বিএনপিকে এক মঞ্চ থেকে অভিন্ন এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাব করলেও যুগপতভাবে অর্থাৎ যার যার প্ল্যাটফর্ম থেকে এই ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ১২ জুলাই ঢাকায় একটি সমাবেশ ডাকা হয়েছে। অনুরূপভাবে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত দলগুলো যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাসী ও জনগণের ভোটাধিকার চান- সে সব রাজনৈতিক দলও ওই দিন যার যার অবস্থান থেকে ঢাকায় সমাবেশ বা সংবাদ সম্মেলন করবেন। এর মধ্য দিয়ে ওই দিন জাতিকে একটি বার্তা দেয়া হবে। তবে সেই বার্তাটা কী, তা জানার জন্য ১২ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এক দফার আন্দোলন সামনে রেখে ঢাকাকে ঘিরে বিএনপির পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের কী পরিকল্পনা থাকে, কৌশল কী হয়- সেটা কখনো গণমাধ্যমকে জানানো হয় না। সেটা দলের সব নেতাও জানেন না, কিছু নেতা জানেন। এটা বাস্তবায়নে কর্মীরা মাঠে কাজ করে।