আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির আমলে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো বিতর্কিত নির্বাচন কখনও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়নি এবং হবেও না। আমাদের সরকারের সময়ে কোনও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। আমরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করতে পেরেছি।
বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় সফরে সুইজারল্যাণ্ডে অবস্থানকারী প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
কাজিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমতা দখল করতে আসেনি বরং জনগণকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এসেছে, যাতে জনগণ তাদের সরকার বেছে নিতে পারে।’
আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেটের ওপর বিশ্বাসী জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময়ই দেশে ওয়েস্ট মিনিস্টার স্টাইলের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছে। জনগণ ঠিক করবে কে দেশ চালাবে। এটা জনগণের ক্ষমতা। আমাদের সরকার জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে যতগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জাতীয় সংসদের শূন্য পদের নির্বাচন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন/উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ যাকে ভোট দিয়েছে সে-ই নির্বাচিত হয়েছে। সরকারের সকল দফতর/বিভাগ এতে সহযোগিতা করেছে। আমরা দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যারাই পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় তারা পাঠাতে পারবে।’
নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে দায়িত্বপালন করতে পারে সে জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ, ভীতিহীন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহায়তা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘দেশের জনগণ যাতে তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে সে লক্ষ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে আমাদের সরকার সদা প্রস্তুত রয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন আইন-২০২২ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে সরকার যা যা আবশ্যক সে সকল বিধি প্রণয়ন করবে বলেও জানান সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করে যাবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে যা যা করার সবকিছু করবে।’
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত তিন যুগ ধরে সংসদে আমি গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিরলস কাজ করছি। বাংলাদেশের জনগণই আমার শক্তি, প্রেরণা। বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে যেকোনও ত্যাগ স্বীকার করতে সদা প্রস্তুত আমি।’
তিনি বলেন, ‘ধারবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার ফলে বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।’
বগুড়া-৫ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫ হাজার ৭০১ গবেষককে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। এতে তাদের ১১৫ কোটি ৫০ লাখ ৫৯ হাজার ৫৫০ টাকা দেওয়া হয়।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করি এবং দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদা হানিকর কোনও হীন উদ্দেশ্যকে আমি কখনোই প্রশ্রয় দেবো না বলে উল্লেখ করি।’
তিনি বলেন, ‘বক্তব্যের পর আমি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে পদ্মা সেতুর বাঁধাই করা একটি চিত্রকর্ম উপহার দেই। বিশ্বব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল তারা তা বুঝতে পেরেছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো বাংলাদেশের প্রতি তাদের অব্যাহত আস্থা ও সহায়তার পরিচায়ক।’