ভারতে রেল দুর্ঘটনা: শনাক্ত হয়নি ১৬০ মৃতদেহ, এখনও নিখোঁজ ৪ বাংলাদেশি

Slider সারাবিশ্ব


শুক্রবার ( ৪ জুন ) সন্ধ্যায় ভারতের ওড়িশায় ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পর কেটে গেছে প্রায় দুই দিন। ইতোমধ্যে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে সরকার। রেল সূত্রে জানা গেছে, নিহতের সংখ্যা ২৮৮ এবং আহত ৯০০-র বেশি। ওড়িশা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত ১৬০টি মৃতদেহ শনাক্ত করা যায়নি। যেসব মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বা শনাক্তকরণ হয়নি সেগুলো আপাতত রাখা হয়েছে বালেশ্বরের বাহানগা হাই স্কুল এবং উত্তর ওড়িশা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি অস্থায়ী মর্গে।

ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ কুমার জেনা রোববার সাংবাদিকদের বলেন ‘সনাক্তকরণ সম্ভব হয়নি এমন ১৬০টি মৃতদেহ ভুবনেশ্বর এমসের মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ৪২ ঘণ্টা সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা হবে। এই সময়ের মধ্যে যে সমস্ত মৃতদেহ শনাক্ত করা যাবে না, সেগুলো নির্দিষ্ট মেডিক্যাল পদ্ধতি মেনে সৎকার করে ফেলবে ওড়িশা সরকার।’

ওড়িশা সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, নিয়ম মেনে মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। সংরক্ষণ করা হচ্ছে ডিএনএ স্যাম্পল। রোববার বাহানগা হাই স্কুলের হলঘরের অস্থায়ী মর্গের সামনে দেখা গেছে নিহতদের ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে একটি টেবিল। উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারলে তা তুলে দেয়া হচ্ছে পরিবারের হাতে।

ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘নর্থ ওড়িশা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র অস্থায়ী মর্গে আছে প্রায় ১০০টি মরদেহ যা সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বাহানগা হাই স্কুলের হলঘরে তৈরি অস্থায়ী মর্গে রয়েছে এমন আরও ৬০টি মরদেহ। শুক্রবার ( ২ জুন ) দুর্ঘটনার পর আহতদের মধ্যে নিজের স্বজনদের না পেয়ে অনেকেই ভিড় করছেন এই অস্থায়ী মর্গের সামনে।

দুর্ঘটনার পর শনিবার সন্ধ্যায় বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে যান কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব শেখ মারেফাত তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। রোববার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতাল ও দুই অস্থায়ী মর্গ ঘুরে নিখোঁজ ৪ বাংলাদেশী নাগরিককে এখনও খোঁজে পাননি তারা। তবে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত এবং আতঙ্কিত এমন ৩ বাংলাদেশী নাগরিকের হদিস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ দূতাবাসের তরফ থেকে ইতোমধ্যেই ভারতীয় রেলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, সফরকারি বাংলাদেশি নাগরিকদের টিকিট বুকিং এর সময় দেয়া নাগরিকত্বের পরিচয়কে পৃথক করতে এবং সফরকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিচয় আলাদাভাবে দূতাবাসকে জানানোর জন্য। যদিও রেলের তরফ থেকে এখনও কোনো সাড়া মেলেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলের প্রকাশ করা যাত্রী তালিকার বাইরেও আরও অনেক বেশি যাত্রীর দুর্ঘটনার কবলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ রেল যে যাত্রী তালিকা প্রকাশ করেছে সেটি মূলত সংরক্ষিত কামরার যাত্রী তালিকা। ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরার যাত্রী তালিকা রেলের কাছে থাকা সম্ভব নয়। দুর্ঘটনাগ্রস্থ করোমন্ডল এক্সপ্রেসের অসংরক্ষিত কামরাগুলো ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে সনাক্ত করা যায়নি এমন নিহতদের নাম এবং পরিচয় জানতে আরও অনেক বেশি সময় লাগতে পারে।

২০১০ সালের ২৮ মে পশ্চবঙ্গের সরডিহা ও খেমাশুলির মাঝখানে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার ঘটনা ঘটে। ১৩ বছর আগে সেই দিনে মুম্বাইগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস সর্ডিহার রাজাবাঁধ এলাকায় লাইন থেকে ছিটকে পড়ে। এই ঘটনায় ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৪ শতাধিক। রেলের হিসাবে ঐ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ ২৪জন। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার পরে ৩৭ জনের দেহ শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরে ডিএনএ পরীক্ষা হয়। ধাপে ধাপে ১৩ জনের দেহ শনাক্ত হয়। বাকি ২৪ জনের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *