মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের রূপরেখা নেই, বাড়বে খরচের চাপ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বর্তমান বাস্তবতায় তা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার কোনো ব্যাখ্যা বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেননি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নির্বাচনের বছরে দেওয়া হলেও এ বাজেটে নতুন কোনো চমক কিংবা জনতুষ্টিমূলক তেমন কিছু নেই। উল্টো রাজস্ব আয় বাড়াতে এবার করের চাপ বাড়বে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব মানুষের ওপর।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট বক্তব্যে মূল্যস্ফীতিকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে পৌঁছায়। এই বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তা ৮ শতাংশের ঘরে নামে। কিন্তু মার্চে তা আবার বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়ায়। সেখান থেকে সামান্য কমে গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরও বেশি হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাজনিত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য সরকার মূল্যস্ফীতিকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রেখে বাজারে পর্যাপ্ত মুদ্রা সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মতো কৌশল অবলম্বন করছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।’

কয়েক দফা সুদের হার কমানো এবং বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক ছাড়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, খোলাবাজারে চাল বিক্রয় এবং ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের মতো কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

তবে এসব পদক্ষেপকে আগের নেওয়া উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘এসব পদক্ষেপের পরেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ৯ থেকে কাক্সিক্ষত ৬ শতাংশে কীভাবে নামিয়ে আনা হবে সে বিষয়ে বাজেটে নতুন কিছু নেই। সামান্য কিছু যা আছে তা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আছে। মূলত এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কিছু নেই, যা আছে বিশেষ করে বাজেট ঘাটতি ও করের যেসব পদক্ষেপ রয়েছে তাতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’

প্রতি বছরই বাজেটে শুল্ক পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দামের হেরফের ঘটে। এবারও বাজেটে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় শুল্ক পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এতে বাজেট পাসের পর এসব জিনিসপত্র ও সেবার পেছনে খরচ বাড়বে সাধারণ মানুষের।

প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেট সামগ্রীসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যের দাম বাড়তে পারে। একইভাবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি থালাবাসনসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়তে পারে। এছাড়া টিস্যু, কলম, বিদেশি সাবান, সানগ্লাস, মোবাইল হ্যান্ডসেট, এলপিজি সিলিন্ডার, লিফট, সিমেন্ট, আমদানি করা সফটওয়্যারসহ কাজুবাদাম, বাসমতি চাল, প্রক্রিয়াজাত ফল, খেজুর, সাইকেলের দাম বাড়তে পারে। পাশাপাশি ভ্রমণ কর বাড়ানোর প্রস্তাবে বাড়তে পারে বিদেশে যাওয়ার খরচ।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘এ মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ কষ্ট করছে। এমন পরিস্থিতিতে এটি কমিয়ে আনার কথা বলা হলেও কীভাবে কমানো হবে তা পরিষ্কার হয়নি। আমি মনে করি এ বাজেটে যে বড় ঘাটতি ধরা হয়েছে তার অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেওয়া হবে তা উল্টো মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *