টাইব্রেকারে আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

Slider খেলা


দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনালের লড়াই মানে টানটান উত্তেজনা, অন্যরকম ‘যুদ্ধ’। তাই তো ফেডারেশন কাপে ট্রফি জয়ের ম্যাচে উত্তেজনার পারদ চেপে বসেছিল সবার মাঝেই। সুলেমানে দিয়াবাতের হ্যাটট্রিকের পরও আট গোলের ম্যাচে ১২০ মিনিটে ম্যাচের ফল নিষ্পত্তি হয়নি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ভাগ্য পরীক্ষায় নামতে হয়েছে। সেখানে আবাহনীকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ১৪ বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতে সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়েছে।

টাইব্রেকারে মোহামেডানের হয়ে গোল পেয়েছেন সুলেমানে দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার ও কামরুল ইসলাম। তৃতীয় শটে শাহরিয়ার ইমনকে ঠেকান গোলকিপার সোহেল।

বিপরীতে শুরুতে আবাহনীর রাফায়েল অগাস্তোর শট গোলকিপার আহসান হাবিব বিপু ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন। এমেকা ও ইউসেফ মোহাম্মদ গোল করলেও কলিনদ্রেসের শট রুখে দিয়ে বিপু হন জয়ের অন্যতম নায়ক।

এর আগে কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষে স্কোর ৪-৪ গোলে সমতায়। শুরুর দিকে রাফায়েল ও বাবলুর প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে মোহামেডানকে ম্যাচে রাখেন গোলকিপার সুজন। ১০৫ মিনিটে মোহামেডান এগিয়ে যায়। দিয়াবাতেকে পা টেনে ফেলে দেন আবাহনীর গোলকিপার সোহেল। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি দেন। স্পট কিক থেকে দিয়াবাতে জোরালো শটে নিজের চতুর্থ গোল করে দলকে লিড এনে দেন।

১১৭ মিনিটে আবাহনী আবারও সমতায় ফেরে। রয়েলের পাসে রহমত মিয়া বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে জাল কাঁপান। বদলি গোলকিপার আহসান বিপুর হাত ছুঁয়ে বল জড়ায় জালে।

নির্ধারিত ৯০ মিনিটের শুরু থেকে আবাহনীর আক্রমণাত্মক ফুটবলের বিপরীতে মোহামেডান প্রতি আক্রমণ নির্ভর খেলতে থাকে। ম্যাচ ঘড়ির ১৭ মিনিটে আবাহনী এগিয়ে যায়। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে এমেকা ওগবাহর দারুণ পাস থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ক্ষিপ্র গতিতে ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলকিপার সুজন হোসেনকে পরাস্ত করেন। এগিয়ে যাওয়া গোলে আতশবাজি ফুটিয়ে উৎসব করেছে আকাশী-নীল জার্সিধারী সমর্থকরা।

২৯ মিনিটে কলিনদ্রেস-এমেকা হয়ে বল পেয়ে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম সরাসরি লক্ষ্যে শট নিলেও এই যাত্রায় গোলকিপার প্রতিহত করে ব্যবধান বাড়তে দেননি। ৩৮ মিনিটে কলিনদ্রেসের ক্রসে এমেকা মাথা ছোঁয়াতে পারেননি।

৪৩ মিনিটে আবাহনী ব্যবধান বাড়িয়ে নেয়। মোহাম্মদ হৃদয়ের লং পাস থেকে বক্সের ভেতরে পেয়ে কলিনদ্রেস ডিফেন্ডার হাসান মুরাদকে ছিটকে দিয়ে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে দারুণভাবে জাল কাঁপান। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে কলিনদ্রেসের ফ্রি-কিক পোস্ট ছুঁয়ে যায়।

এই অর্ধে মোহামেডান মাঝেমধ্যে প্রতিপক্ষের অর্ধে গিয়ে বল নিয়ে গেলেও গোলকিপার সোহেলকে বড় পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। সেটপিস থেকে সুযোগ এসেছিল। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি দিয়াবাতে-ইমানুয়েলরা।

বিরতির পর ম্যাচ আরও জমে ওঠে। মোহামেডানের হয়ে মাঠে নামেন শাহরিয়ার ইমন ও জাফর ইকবাল। সাদা-কালোরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এই অর্ধে হয়েছে চার গোল। শুরুর দিকে ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে দিয়াবাতের জোরালো শট দূর দিয়ে যায়।
৫২ মিনিটে শাহরিয়ার ইমনের পাসে ইমানুয়েল সানডের জোরালো শট সাইড নেট কাঁপায়। ৫৫ মিনিটে জাফর ইকবালের জোরালো শট গোলকিপারের গ্লাভসে জমা পড়ে। ৫৭ মিনিটে মোহামেডান এক গোল শোধ দেয়। কামরুল ইসলামে লং বল থেকে আলমগীর মোল্লা হেডে ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি, বক্সের ভেতরে বল পেয়ে দিয়াবাতে সাইড ভলিতে লক্ষ্যভেদ করেন।

৬০ মিনিটে স্কোরলাইন ২-২। জাফর ইকবালের বাঁ প্রান্তের ক্রসে দিয়বাতের জোরালো হেড জড়িয়ে যায় জালে। ৬৫ মিনিটে সোহেল রানার ক্রসে এমেকার হেড ক্রস বারে লেগে প্রতিহত হয়। ৬৬ মিনিটে ফাহিমের জোরালো শট গোলকিপার সুজন ঠিকঠাক প্রতিহত করতে পারেননি, ৬ গজের দূরত্বে থেকে এমেকা দারুণ শটে জাল কাঁপান।

৮৩ মিনিটে দিয়াবাতে হ্যাটট্রিক করে দলকে সমতায় ফেরান। সতীর্থের কর্নারে তিনি লাফিয়ে উঠে লক্ষ্যভেদ করে সাদা-কালোদের প্রাণ নতুন করে ফিরিয়ে আনেন।

অতিরিক্ত সময়ের পর টাইব্রেকারে উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচ জিতে মোহামেডান নতুন করে স্বমহিমায় ফিরেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *