ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

Slider চট্টগ্রাম


দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোখা যত এগিয়ে আসছে তত বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এসব ক্যাম্পে লাখ লাখ শরণার্থীর বসবাস হলেও নেই কোনো সাইক্লোন শেল্টার। এ ছাড়া পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তৈরি করা ক্যাম্পে ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে। তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিকল্প কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। তবে ক্যাম্পগুলোতে ১০টি মেডিক্যাল টিম, ৪শ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স ও ১৬শ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআসি) কার্যালয়ের এক সভায় ঘূর্ণিঝড়ে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প এলাকার সরকারি মজবুত স্থাপনাগুলোয় আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে স্কুল, মাদ্রাসার মতো এসব স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রোহিঙ্গারা। তাদের ভাষ্য, সরকারি বেশির ভাগ স্থাপনা টিনশেড। ক্যাম্পে ছাদ দেওয়া বা বহুতল কোনো স্থাপনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় মোখায় রোহিঙ্গাদের জীবনই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি তাদের। তারা ক্যাম্পের আশপাশের গ্রামে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের আশ্রয়ের দাবি জানিয়েছেন।

টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হালিমা বেগম বলেন, ‘ঘরে ছোট বাচ্চা আছে, আবার বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িও আছেন। ঝড়বৃষ্টি বেশি হলে এদের নিয়ে কোথায় ছোটাছুটি করব- ভেবে পাচ্ছি না। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে আমাদের ক্যাম্পের বাইরে অবিস্থত বহুতল ও ছাদবিশিষ্ট ভবনে আশ্রয়ের সুযোগ দেওয়া হোক।’

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, সব রোহিঙ্গা শিবিরে লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। মাইকিং করে ক্যাম্পের দুর্বল ঘরগুলো বাঁশ ও রশি দিয়ে মজবুত করতে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি পাহাড়ে অতি ঝুঁঁকিপূর্ণদের চিহ্নিত করে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ক্যাম্পে সচেতনতামূলক মাইকিং চলছে বলে জানান টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ঘরগুলো পাহাড়ের উঁচু জায়গা বা টিলায় অবস্থিত হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, যেসব স্থাপনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে, সেগুলোকে রোহিঙ্গারা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে নিরাপদ ভাবছেন না। উনচিপ্রাং ২২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি সাব্বির বলেন, তাদের ঝুঁঁকিপূর্ণ ঝুপড়ি ঘরগুলো শক্তভাবে বেঁধে প্রস্তুত করার জন্য প্রশাসন ও এনজিওর পক্ষ থেকে রশিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে। মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ে ঝুঁঁকিপূর্ণ বসতিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নয়াপাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাঈনুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের সময় রোহিঙ্গাদের শূন্য ঘরে বিভিন্ন ধরনের চুরি, ডাকাতিসহ সব ধরনের অপরাধ দমনে এপিবিএন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা নয়ন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইওএম ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টসহ অন্য স্বেচ্ছাসেবকদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি চিকিৎসা, উদ্ধার, ত্রাণ সহায়তা থেকে শুরু করে নানা কাজের জন্য দল গঠন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবক, রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক এবং ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় থাকা কমিটির সব সদস্যকে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *