ছেলে গুম হওয়ার আশঙ্কায় বিকল্প প্রার্থী হলেন মা

Slider বিচিত্র


গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে ছেলের গুম হওয়ার আশঙ্কায় মা বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

গুম হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে গাসিকের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার কোনো সমস্যা হলে আমার মাকে আপনারা সহযোগিতা করবেন। আমার মায়ের পক্ষেও আজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি আরো আরো বলেন, ‘পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত একজন মেয়রকে তিন বছরের মাথায় তারা একটা মিথ্যা চিঠি দিয়ে এমনটা (বহিষ্কার) করেছে। হয়তো কালকের পর আমার পায়ে শিকল পড়তে পারে, আমাকে অ্যারেস্ট করতে পারে, আমাকে গুমও করতে পারে। আমি দেশবাসী এবং আমার নগরবাসীকে বলে যাই, যদি আমার মৃত্যু হয়, আপনারা বিশ্বাস করবেন, আমি এই শহরকে রক্ষা করার জন্য যা যা ভালো কাজ, তা-ই করেছি। হয়তো বা অনেকে ক্ষমতার কারণে মিথ্যাচার করতে পারে, বিভিন্নভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে, এ দেশে অপরাধী সাজানোর জন্য যেভাবে নাটক সাজানো হয়, আমার বিরুদ্ধেও এমন অনেক কিছু করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, আমি আজ আপনাদের সামনে এসেছি, হয়তো জীবনে আর নাও আসতে পারি। কিন্তু আমি বলতে চাই, এই শহরের মানুষের ক্ষতি হয়, এমন কিছু আমি করিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু লোক মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার ক্ষতি করেছে, আমার শহরের ক্ষতি করেছে। আমি এক কঠিন সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি। ভোটটা বড় কথা নয়, শহরটা রক্ষা করাই বড় কথা। এখানে মিথ্যার জয় হয়েছে, পতন ঘটেছে সত্যের। যারা এই মিথাকে সত্য বানিয়েছে, আমি তাদেরও বিচার চাই।

তিনি আরো বলেন, মাননীয় নেত্রীকে মা বলেছি, ওনিও মায়ের স্থানে আছেন। ওনি আমাদের দেশের অভিভাবক। কিন্তু যিনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন, তিনি আমার মা। আমার মা যদি হুকুম করেন, তাহলে তার জন্য আমি জীবন দেব। এই শহরকে রক্ষা করতে, আমার নেতাকর্মীদের রক্ষা করতে যা কিছু প্রয়োজন, আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত আছি। আমি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সুন্দর একটি ভোট চাই। আজ আমি এক ব্যক্তি দাঁড়িয়েছি। আমার ওপর থেকে আজ সব ছায়া সরে গেছে। কিন্তু আল্লাহর ছায়া, আমার মায়ের ছায়া, নগরবাসীর ছায়া, দেশের আপামর জনগণের ছায়ায় গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক ভোট চাই। সত্যের জয় হবেই, ২৫ মে সেই সত্যের জয় দেখার অপেক্ষা করছি।’

এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সাথে নিয়ে মনোননয়নপত্র দাখিল করেন। নগর আওয়ামী লীগে কোনো বিরোধ নেই দাবি করে তিনি বলেন, এবার নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। এই বিজয় হবে আওয়ামী লীগের, এই বিজয় হবে নগরবাসীর।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোননপত্র দাখিল করলেন টঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী সরকার পরিবারের সন্তান সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদলের যুব ও শিল্পবিষয়ক সম্পাদক কারারুদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি।

তিনি বলেন, ‘টঙ্গী তথা গাজীপুরের উন্নয়নে আমাদের পরিবারের অনেক অবদান রয়েছে। এছাড়া আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম সরকারকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আহসান উল্লাহ মাস্টারের হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, যা এলাকার সকলেই অবগত আছেন। আমরা নির্যাতিত পরিবার। জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমার বাবা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। ফলে সার্বিক বিবেচনায় নগরবাসী এবারও আমাদের পক্ষে রায় দেবে বলে আমার বিশ্বান রয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার মেয়র পদে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা অঞ্চলের সভাপতি ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল।

তিনি নগরবাসীর সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি তারুণ্যের শক্তি নিয়ে নবজাগরণ ঘটাতে চাই। দীর্ঘ দিন ধরেই আমি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। নগরজুড়ে আমার ব্যাপক পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে। একজন প্রকৃত খাদেম হিসেবে নগরবাসীর সেবা করার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এ লক্ষ্যে আমি বহু আগে থেকেই মাঠ গোছানোর কাজ করছি। আমার মাঠ প্রস্তুত রয়েছে। জনগণ আমাকে নিরাশ করবেন না, আমি সফল হব ইনশাআল্লাহ।’

অপরদিকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমের বিশ্বসযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে জাপা প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ইভিএম হলো একটি যাদুরবাক্স। এটি যেহেতু মানুষ চালায়, তাই মানুষের কথাই শুনবে। কাজেই এতে সুক্ষ্ম কারচুপির সুযোগ রয়েছে। ইভিএম এর সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সকলের আস্থা অর্জন করতে হবে।

তিনি ইভিএমে কারচুপি ঠেকাতে গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষক মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো: ফরিদুল ইসলাম জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেয়র পদে মোট ১২টি, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে মোট ৮২টি ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে মোট ২৯০টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এম এম নিয়াজ উদ্দিন (জাতীয় পার্টির), আতিকুল ইসলাম (গণফ্রণ্টের), আব্দুল্লাহ আল মামুন (স্বতন্ত্র), মো: হারুন অর রশীদ (স্বতন্ত্র), সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি (স্বতন্ত্র), অ্যাডভোকেট মো: আজমত উল্লা খান (আওয়ামী লীগ), গাজী আতাউর রহমান (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), মোহাম্মদ অলিউর রহমান (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (স্বতন্ত্র), জায়েদা খাতুন (স্বতন্ত্র), মো: রাজু আহম্মেদ (জাকের পার্টি) ও মো: আবুল হোসেন (স্বতন্ত্র)।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ এপ্রিল, বাছাই ৩০ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া হবে ৯ মে এবং ভোট গ্রহণ হবে ২৫ মে। সব ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।

গাজীপুর জেলা নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১। এর মধ্যে পুরুষ পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭২১, নারী পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪২ এবং হিজড়া ভোটার ১৮ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *