সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনাসহ দুঃশাসনে মানুষের মনে কোনো আনন্দ-উৎসব নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
আজ রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রিন্স বলেন, ঈদ মানে আনন্দ। একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদ সকলের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে। কিন্তু এবারের রোজা ও ঈদে জনগণের কষ্ট হয়েছে। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে থাকা মানুষের মনে কোনো আনন্দ ছিল না। এবারের ঈদ মানুষের জন্য ছিল নিরানন্দ। সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনাসহ দুঃশাসনে মানুষের মনে কোনো আনন্দ-উৎসব নাই।
আওয়ামী সরকার দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদকে গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কারাগারে তাকে সু-চিকিৎসা দেওয়া হয় নাই। সকল মামলায় জামিন থাকলেও অন্যায়ভাবে ঠুনকো কারণে তাকে ঈদের আগে মুক্তি দেওয়া হয় নাই। এটা সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে রিজভী আহমেদ এর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, ঈদের একদিন আগে অর্থাৎ ২০ এপ্রিল রাতে তারাবি নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিনকে পুলিশ বিনা কারণে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
গত ১০ এপ্রিল আসরের নামাজের পর বাড্ডা থেকে সাদা পোশাকধারীরা জিয়া মঞ্চের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়ালকে তুলে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অবিলম্বে এ এ জহির উদ্দিন তুহিনের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আমরা অবিলম্বে জিয়া মঞ্চের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়ালকে জনসম্মুখে হাজির করারও দাবি জানাচ্ছি।
ঈদের আগেও সরকার মিথ্যা মামলা বন্ধ করে নাই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি এই নেতা।
তিনি বলেন, গত ২০ এপ্রিল ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারসহ ও তার ভাই যুবায়ের হোসেন তালুকদারসহ তারাকান্দা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১১ নেতাকর্মীর নামে ও ১০/১২ জন অজ্ঞাত উল্লেখ করে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিনেও যা বলেছেন তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ায় মানুষ এখন গ্রামে গ্রামে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। শুধু গ্রাম নয়, গ্রাম-শহরের মানুষের মনে যে, ঈদের আনন্দ নাই-জনগণের নির্বাচিত সরকার হলে বা জনসম্পৃক্ত সরকার থাকলে তারা উপলব্ধি করত। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসণের ও জনবিচ্ছিন্ন সরকারের পক্ষে তা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। শতভাগ বিদ্যুতায়নের মিথ্যা দাবি করা সরকারের মিথ্যা উন্নয়ন কেমন তা গ্রাম-শহরের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তীব্র দাবদাহ প্রচন্ড গরমে বিদ্যুতের অভাবে বার বার লোডশেডিং এ গ্রাম-শহরের মানুষের জীবন যখন নাকাল, তখন ঈদের দিনে প্রধানমন্ত্রীর এহেন মিথ্যা দাবি জনগণের সাথে নির্মম রসিকতা ছাড়া আর কিছুই না। ঘরে ঘরে আজ বিদ্যুৎ নাই। ঘরে ঘরে অন্ধকার নেমে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রাম ও শহরে বিদ্যুৎ সংকট এতটাই তীব্র ও প্রকট যে, প্রচন্ড গরমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০/১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় মানুষ দিনাতিপাত করছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কলকারখানায় এবং কৃষিতে প্রভাব পড়েছে। প্রচন্ড খরতাপের ফসলের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, বিদ্যুতের অভাবে মানুষ জমিতে পানি দিতে পারছে না, ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। রমজান মাস এমনকি ঈদেও মানুষ পরিবার, পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তিনি আরও বলেন, রোজার মধ্যেও প্রতিদিন প্রতিটি দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, এমনকি ঈদের আগের দিনও বেড়েছে। কাপড়ের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈদের মধ্যে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্তরাও পরিবারের সদস্যদের ঐতিহ্যগত ঈদ উপহার দিতে পারে নাই।
প্রিন্স বলেন, দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ব্যর্থ হওয়া সরকার মিথ্যা অযুহাতে সারের দাম বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ববাজারে সারের দাম যখন ৬২ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গেছে, সরকার তখন তাদের অব্যবস্থাপনা, অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত, দুর্নীতি, লুটপাট আড়াল করতে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির মিথ্যা কথা বলে বাংলাদেশেও সারের দাম বৃদ্ধি করেছে। মিথ্যাচারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকারের সিরিজ মিথ্যাচারে এ এক নতুন সংযোজন। এর মধ্যে সরকার ধানের যে ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে, তাতেও কৃষকরা হতাশ। এতে কৃষকরা লাভবান হবে না, লাভবান হবে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যস্বত্ত্বভোগী নেতাকর্মীরা। সরকার নিজেই বলছে, প্রতি কেজি ধান উৎপাদন ২৯.৮০ টাকা খরচ হয়েছে। সেখানে সরকার প্রতি কেজি ধানের দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে কৃষকের সাথে প্রতারণা করেছে। আর এই ধান বিক্রয় করে কৃষকরা সারাবছর ঈদ সহ অন্যান্য আয়োজনে এবং জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহ করে। কৃষকের সাথে এটা সরকারের মহাপ্রতারণা এবং মশকরা ছাড়া আর কিছুই না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা শিরিন সুলতানা, ডা. রফিকুল ইসলাম, খোন্দকার মাশুকুর রহমান, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, এড. জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক-রাজীব আহসান প্রমুখ।