গাজীপুর, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহী- এ পাঁচ সিটি করপোরেশনে এবং পাঁচটি পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রয় ও জমা দেওয়ার কার্যক্রম গতকাল বুধবার শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। ৯-১২ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চলে এ কার্যক্রম। ফলে গত চারদিন দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন এ কার্যালয়মুখী। তারা এখন গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছেন দলীয় মনোনয়ন বোর্ড কী সিদ্ধান্ত দেয়, সেই অপেক্ষায়।
দলের দপ্তর সূত্রের খবর, ৫ সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে শুধু গাজীপুর সিটির মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ১৭ জন, রাজশাহীতে ৩ জন, খুলনায় ৪ জন, বরিশালে ৭ জন এবং সিলেটে ১০ জন। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ২৫ হাজার টাকা। জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রগুলো গতকালই দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, আগামী শনিবার (১৫ এপ্রিল) গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হবে ৫ সিটির দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তকরণে।
মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশী কাউকে কাউকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। তারা ভাবছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হলে এবারও ছাড় পেয়ে যাবেন। কিন্তু এসব প্রার্থীর মনে রাখতে হবে, সামনে আর এমনটি হবে না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের দল স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে। পাশাপাশি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনও প্রত্যাশা করে। নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবে সে বিজয়ী হবে। তাই নেতাকর্মীদের প্রতি আমাদের নির্দেশনা এবং একই সঙ্গে প্রত্যাশা- তারা যেন জনগণের মন জয় করে। তিনি বলেন, যেহেতু দল প্রার্থী দেবে তাই দলীয় শৃঙ্খলা মেনে প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। কেউ দলের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ সিটির দুটিতে অর্থাৎ গাজীপুর ও সিলেটে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমতউল্লাহ খান ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন। অন্যদিকে সিলেটে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজবাহউদ্দিন সিরাজ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন। এ দুজনের মধ্যে শিপলু সাবেক মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমেদ কামরানের ছেলে। এ সিটিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেকের দলীয় প্রার্থী হতে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। দল থেকে তাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। হাইকমান্ডের ইতিবাচক সংকেত পেয়েছেন বরিশাল সিটির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহও। তবে মনোনয়নপ্রাপ্তিতে বাধা হতে পারেন তার চাচা যুবলীগের সদস্য আবুল খায়ের আবদুল্লাহ।
গত চার দিন আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, মনোনয়ন ফরম কেনার সময় নীরব হলেও জমা দেওয়ার সময় বেশ সরব ছিলেন নেতারা। সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, গাজীপুরের মেয়রপ্রত্যাশী জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর সিটি মেয়রপ্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সিলেটের প্রয়াত মেয়র কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু বিশাল শোডাউনসহ মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে নীরব ছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। তার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৭ এপ্রিল, বাছাই ৩০ এপ্রিল এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ৮ মে পর্যন্ত। খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে ও ২৫ মের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে, বাছাই ২৫ মে ও ১ জুনের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা সিটিতে এবং ২১ জুন সিলেট ও রাজশাহী সিটিতে ভোট হবে। প্রতিটি সিটিতেই থাকছে ইভিএম।