নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, নতুন নিবন্ধন চাওয়া ১২টি রাজনৈতিক দলের কাগজপত্র প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে সঠিক পাওয়া গেছে। এখন এসব দলের মাঠপর্যায়ের অফিসের খোঁজ নেওয়া হবে। পরে তাদের নিবন্ধন দেওয়া হবে।
আজ মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান।
প্রাথমিক বাছাইয়ে যে ১২ দলের কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেছে সেগুলো হলো— এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)।
এর মধ্যে গণ অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর। নাগরিক ঐক্যের নেতৃত্বে রয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। এবি পার্টির নেতাদের বড় অংশই জামায়াতে ইসলামের সাবেক নেতা। তবে সংক্ষিপ্ত এই তালিকায় জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) নাম নেই। যদিও এ দলটি প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকেছিল।
ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘কমিশনের অনানুষ্ঠানিক সভা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন করে নিবন্ধন পেতে ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ১৪টি আবেদন নির্দিষ্ট ফরমেটে ছিল না। দুটি আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। অবশিষ্ট ৭৭টি দলকে ১৫ দিনের মধ্যে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। ১৯টি দল ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে পারেনি। এছাড়া দুটির চিঠি ঠিকানা ঠিক না থাকায় চিঠি ফেরত এসেছে। ১০টি দল সময় আবেদন করেছিল। সেটা না মঞ্জুর করা হয়েছিল। এভাবে ৩১টি আবেদন পরবর্তী সময়ে বাতিল হয়। অবশিষ্ট ছিল ৪৬টি আবেদন। এই ৪৬টি আবেদন যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে নীতিমালা আইন এবং চাহিত তথ্যের সঙ্গে তারা যা দিয়েছে তা পূরণ না করায় ৩৪টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ১২টি দল থাকে। তারা যে তথ্য দিয়েছে তা মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাছাই করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর কমিশন তা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবে।’
কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি আমাদের যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শেষে এই ১২টির বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যার কারণে সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও কেন্দ্রীয় অফিস আছে কি না ইত্যাদি যাচাই করা হবে। আমরা বলেছি ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য দিতে হবে। রোডম্যাপ অনুযায়ী, জুনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।’
মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ের পর কয়টা টিকবে, কারা টিকবে সেটা বলতে পারব না। এসব দলের উপজেলা পর্যায়ে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকতে হবে, এখন সেটা যাচাই করা হবে। এক-তৃতীয়াংশ জেলায় অফিস আছে কি না; সেই রিপোর্ট আসার পর সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।’
সচিব জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী তিনটি শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করলে সেই রাজনৈতিক দলটি নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। শর্ত তিনটি হলো— ১. বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে একটি আসন পেতে হবে; ২. কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত ৫ শতাংশ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং ৩. দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ও অন্তত ১০০টি উপজেলায় বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসাবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।