চাহিদার কাছাকাছি উৎপাদন, সহনীয় লোডশেডিং

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


বিদ্যুতে বড় কোনো সংকট ছাড়াই পার হচ্ছে রমজান মাস। এ মাসে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নিয়ে আতঙ্কে ছিল খোদ বিদ্যুৎ বিভাগ। বিশ্বব্যাপী তেল, গ্যাস ও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানির পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করাও চ্যালেঞ্জ ছিল সরকারের। তবে গতকাল ১৭ রমজান পার হয়ে গেলেও কোথাও কোথাও অল্প-বিস্তর লোডশেডিং হলেও বড় কোনো সংকটের খবর পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, অন্যবারের তুলনায় এই বছর অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় সরকার। আগে থেকেই গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা ছিল। ফলে এসব কেন্দ্র থেকে গড়ে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গড়ে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক রয়েছে। পাশাপাশি ভারতে আদানি গ্রুপের ঝাড়খণ্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গড়ে সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি বাড়তি সুবিধা যোগ করেছে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, গত শনিবার চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৮৭১ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৯৫১ মেগাওয়াট। গতকাল রবিবার সর্বোচ্চ চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯০২ মেগাওয়াট।

রাজধানী ঢাকার একটি অংশ এবং নারায়ণগঞ্জের বৃহত্তর অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড। বিতরণ কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান আমাদের সময়কে জানান, তাদের এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৬শ মেগাওয়াট। চাহিদার পুরো বিদ্যুৎই পাওয়া গেছে। ফলে কোনো লোডশেডিং করতে হচ্ছে না।

রমজানের আগে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা করা হলেও সেই পরিস্থিতি কীভাবে এড়ানো গেছে জানতে চাইলে বিকাশ বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ ভালো থাকায় উৎপাদন করতে পারছে। এ ছাড়া কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বেসরকারি খাতের কেন্দ্রগুলোও উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ফলে সামগ্রিকভাবে এখনো পরিস্থিতি ভালো। তিনি বলেন, এ ছাড়া আদানি গ্রুপ থেকে যে বিদ্যুৎ আসছে সেটাও গ্রীষ্মের যে সংকট সেটা উত্তরণে সহযোগিত করছে।

ডিপিডিসি ছাড়াও ঢাকার আরেকটি অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। ডেসকোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও জানিয়েছে চাহিদা অনুযায়ী পিডিবি থেকে তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ফলে এখনো কোনো লোডশেডিং করতে হচ্ছে না।

তবে ঢাকার বাইরে বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। নেসকো সূত্রে জানা যায়, তাদের এলাকায় কিছু কিছু লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে মাঝেমধ্যে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শহরে কোনো লোডশেডিং করতে না হলেও তাদের বিতরণ এলাকায় অল্প-বিস্তর লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আরও দুয়েক সপ্তাহ এভাবে কাটাতে পারলে এ বছর তেমন আর কোনো সংকট হবে না আশা করছি। তিনি বলেন, তবে কয়েক দিন ধরে প্রচ- তাপ বাড়ছে। গরম বাড়লে উৎপাদনে সংকট দেখা দেয়। অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তাপদাহের কারলে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারে না। ফলে বন্ধ রাখতে হয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আরও এক-দেড় মাস বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকবে। এ সময়টা স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে পার করাই এখন পিডিবির বড় চ্যালেঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *