আজও খোলা আছে মুক্তির পথ

Slider লাইফস্টাইল


ইমাম গাজ্জালি মিনহাজুল আবেদিন গ্রন্থে বলেন, তওবা হলো পাপের জন্য অনুশোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট মনের বিশেষ ভাবতরঙ্গ। সেই অনুশোচনার ভাব হৃদয়ে ঢেউ খেললে মানুষ পবিত্র হয়। পাপ থেকে মুক্তি পায়। মন পরিচ্ছন্ন হয়। তওবার শুরুতে করণীয় হলো- হৃদয়ে পাপের প্রতি চরম ঘৃণা সৃষ্টি। পরকালের আজাব-গজবের ভয়ে আল্লাহর স্মরণ ও নিজের অক্ষমতার জন্য হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, তওবায়ে নাসুহা বা বিশুদ্ধ তওবা। আল্লাহ পাপ মোচন করে দেবেন। সূরা তাহরীম, আয়াত ৮।

কোরআন আরও বলছে, যারা তাওবা করে, ইমান আনয়ন করে এবং ভালো কাজ করে আল্লাহতায়ালা তাদের খারাপ কাজগুলোকে ভালো কাজ দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আর যারা তাওবা করে এবং নেক কাজ করে আল্লাহর প্রতি তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা (সূরা ফুরকান : ৭০-৭১)

কোরআনুল কারিম আরও বলছে, তারা কি আল্লাহর দিকে তাওবা করে ফিরে আসবে না এবং তাদের গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমা চাইবে না? অথচ আল্লাহ তো ক্ষমাশীল এবং মেহেরবান। (সূরা মায়েদা :৭৪)

মাগফিরাতের সময় চলছে। পাপ মোচনের উপযুক্ত সময়। আল্লাহর দেওয়া ক্ষমার প্রতিটি মুহূর্তকে তওবা-ইসতেগফারে কাজে লাগানো। পাপের গ্লানিতে অনুতপ্ত হওয়া। বরফ গলা জীবনে তওবাই আশার আলো। এক জীবনের পাপ মাফ পাওয়ার একমাত্র অবলম্বন তওবা। হজরত আনাস (রা) বলেন, আমি রাসল (স)কে বলতে শুনেছি। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে বনি আদম, তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে ও আমার প্রতি প্রত্যাশা করবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, তোমার থেকে যত পাপই প্রকাশ পাক, এতে আমি কোনো পরোয়া করি না। হে বনি আদম, তোমার গুনাহ যদি ঊর্ধ্বগগন পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি সামান্য পরোয়া করি না। হে বনি আদম, তুমি যদি আমার কাছে দুনিয়াভরা গুনাহ নিয়ে আসো, অতঃপর শিরকে লিপ্ত না হয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করো, আমি তোমার নিকট জমিন ভরা ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব। (তিরমিজি ৩৬০৮)

রাসুল (স) বলেছেন, দুর্ভাগ্য ওই ব্যক্তির, যে রোজা পেয়েও নিজের পাপ মোচন করাতে পারল না, (তিরমিজি শরিফ)।

বন্ধুরা, নীরবে ভাবুন। আমরা আজ রোজা পেয়েছি। আগামী দিন পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। গত বছর একসঙ্গে রোজা রেখেছি, তারাবি পড়েছি। এ বছর তাদের অনেকেই জীবিত নেই। আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় বরফের মতো গলে গলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। জীবনের অন্যায় অপরাধের ক্ষমার জন্যই এ মহান শক্তির কাছে যাব, যিনি বান্দাকে ক্ষমা করেই আনন্দ পান। যার প্রশস্ত দরবার বান্দার প্রার্থনা কবুল করে। পাপমুক্তির জন্য তওবার নিখুঁত পদ্ধতি সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালি এভাবে বলেছেন- তওবার আগে গোসল করবে, গায়ের জামাকাপড় পরিবর্তন করবে। নিভৃত স্থানে চার রাকাত নফল নামাজ পড়বে। সিজদায় পড়ে কপাল মাটিতে লুটিয়ে দেবে। পাপের অনুশোচনায় কাঁদবে।

মনকে প্রবোধ দেবে, আল্লাহর দরবারে মুক্তির পথ খোলা আছে।

মুদাররিস : শেখ জনূরুদ্দীন (রহ) দারুল কোরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *