পাসপোর্ট করানোর জন্য সপরিবারে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বীকার সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী সেখানকার সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম তুলে ধরে সেগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি ডিজিটাল ও স্মার্ট সেবা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। নতুবা উপযুক্ত প্রতিকার প্রার্থনা করে আদালতে মামলা করা হবে মর্মে চিঠিতে হুশিয়ার করা হয়েছে।
এই আইনজীবীর নাম মো. আবু তালেব। গত বুধবার ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক বরাবর ডাকযোগে তিনি এ চিঠি পাঠান। এতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বেআইনি অগ্রাধিকার সুযোগসহ সারিবদ্ধভাবে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকার প্রথা বাতিল করে টোকেন সিস্টেম চালু করে ডিজিটাল বোর্ডে সিরিয়াল প্রদর্শনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের বসার ব্যবস্থা করা, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা, সবার জন্য একই নিয়ম চালু রাখা এবং কাউকে বিশেষ কোনো সুবিধা না দেওয়ার বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বেঁধে দেওয়া সময়ের
মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ‘উপযুক্ত প্রতিকার প্রার্থনা করে আদালতে আমার নিজের ও জনস্বার্থে আপনার ও সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য থাকব’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
গত ২১ মার্চ দুপুর ১টার দিকে আবু তালেব তার পরিবারের চার সদস্যসহ পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার উদ্দেশ্যে। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় দুঘণ্টা অপেক্ষার পর সিরিয়াল পান। এরপর পুনরায় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন সংশ্লিষ্ট অফিসার কর্তৃক সব কাগজপত্র ভেরিফিকেশনের জন্য। সব মিলিয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার কাজ শেষ করার জন্য। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি চিঠিতে তুলে ধরার পর তিনি উল্লেখ করেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের সার্বিক অব্যবস্থাপনা আমাকে দারুণভাবে কষ্ট দিয়েছে।’ এতে আরও বলা হয়, ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ সরকারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে যে কোনো সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ও স্মার্টলি প্রদান করা। সরকারের বহু অফিস ও বেসরকারি ব্যাংক ও বিমা অফিসে কেউ সেবা নিতে গেলে টোকেন প্রদান ও ডিজিটাল বোর্ডে সিরিয়াল দেখানোর মাধ্যমে সেবার অগ্রগতি নিশ্চিত করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের অফিসে গিয়ে অপরিসীম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রচলিত আইন, বিধি ও সিটিজেন চার্টার অনুসারে সহজলভ্য ও ভোগান্তিহীন পাসপোর্ট পাওয়া আমার ও আমার মতো সাধারণ নাগরিকদের জন্য অনেক দুর্লভ ও ভোগান্তিকর বিষয়। আনসার সদস্যরা হ্যান্ড মাইকে প্রচার করে আসছিলেন, ‘আপনারা সবাই লাইনে দাঁড়ান ও কোনো দালালকে টাকা দেবেন না।’ এ ঘোষণা হতেই স্পষ্ট, মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সিরিয়াল নিতে হয় এবং সেখানে দালালের দৌরাত্ম্য রয়েছে।
অনেককে কোনো লাইন না ধরে কিংবা অন্যান্য নিয়ম না মেনে সরাসরি ফিঙ্গার প্রিন্ট ও দ্রুত ছবি তোলার কাজ সেরে চলে যেতে দেখেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন এ আইনজীবী। এতে তিনি আরও লিখেছেন, যে কোনো নাগরিক উপরোক্ত কাজের জন্য পাসপোর্ট অফিসে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই যেন একটি সিরিয়াল টোকেন নিজে পাঞ্চ করে হাতে নিতে পারেন কিংবা স্টাফের মাধ্যমে পেতে পারেন এবং ডিজিটাল বোর্ডে যাতে সুনির্দিষ্ট বুথ নং প্রদর্শন করে সিরিয়াল ও সময় পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা দুরূহ কোনো কাজ নয়। তাতে মানুষের শারীরিক উপস্থিতি কমে। এত বড় অফিস ভবন অথচ সুনির্দিষ্ট রুমগুলোর সামনে বসার স্থান না দিতে পারাটা সত্যিই দুঃখজনক। সেখানে অবস্থানকাল পাঁচ ঘণ্টা সময়ে দেখিনি যে, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংবা সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ছবি তোলা কিংবা আনুষঙ্গিক কাজের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা রয়েছে।