গাজীপুর: গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৯০-এর ছাত্রনেতাদের আলোচনা সভায় নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের গাজীপুর জেলার সদস্য সচিব এম আশরাফ হোসেন টুলু প্রধান বক্তা হিসাবে এমন দাবি করেন।
মহানগরের রথখোলার শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ অডিটরিয়ামে জাগ্রত-নব্বই গাজীপুর মহানগরের ব্যানারে ‘গণতন্ত্র উত্তরণে ৯০-এর ছাত্র-জনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্রদল নেতা ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম শামীম সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সরকার।
কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি এম আশরাফ হোসেন টুলু আরও বলেন, তিনজনের উপস্থিতিতে (বৈঠকে) একজন স্ট্রোক করল জানতে পারলাম এবং বেশ কিছু দিন হাসপাতালে থেকে তিনি পরপারে চলে গেছেন। সে সময় আমরা দাবি করেছিলাম, বলেছিলাম কেন তার (সোহরাব) মৃত্যু হলো? হঠাৎ করে তার কি হলো, আপনারা দুজন (মান্নানের ছেলে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মন্জুরুল করিম রনি ও সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকার) তার সঙ্গে ছিলেন। আমরা এ মৃত্যুর ব্যাখ্যা চাই। সোহরাব উদ্দিনের মৃত্যুর পর আমি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে ফোন করে বলেছিলাম, এটার কি কোনো তদন্ত করা যায় না? কিন্তু আজও কোনো উত্তর পাইনি। তিনি বলেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিনের মৃত্যুর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা-এ সভা থেকে দাবি করছি এবং এর সাংগঠনিক তদন্ত দাবি করছি। তিনি বলেন, মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে আমাদের সঙ্গে থাকা একজনের হঠাৎ মৃত্যু হলে প্রশ্ন উঠাটাই তো স্বাভাবিক। ওই সময় সোহরাব উদ্দিনের কি হয়েছিল আজও আমরা জানতে পারিনি। এ প্রশ্নের আমরা উত্তর চাই।
আলোচনা সভায় আবদুস সালাম শামীমসহ অনেকেই সোহরাব উদ্দিনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে সাংগঠনিক তদন্ত দাবি করেন। এ সময় সভাস্থলে উপস্থিত শত শত নেতাকর্মী সোহরাব উদ্দিনের রক্ত বৃথা যেতে দেব না বলে মুহুর্মুহু স্লোগান দেন এবং মৃত্যুর কারণ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করেন। এ ছাড়া আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি জানান। কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি জয়নাল আবেদীন তালুকদার এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ভাটের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন টঙ্গী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি শরাফত হোসেন, মহানগর জাসাসের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসান জুন্নুরাইন সোহেল, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বশির আহাম্মেদ বাচ্চু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৯০ ছাত্রনেতা হুমায়ূন কবির রাজু, কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নু, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, আবদুল আউয়াল, কাউন্সিলর তানভীর হোসেন প্রমুখ।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শিল্পপতি সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও শওকত হোসেন সরকারকে সদস্য সচিব করে গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে মনজুরুল করিম রনিকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
অভিযোগ-সোহরাব উদ্দিনকে না জানিয়ে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির নিচে বিশেষ দ্রষ্টব্যে একটি শর্তযুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই শর্তে বলা হয়- আহবায়ক, ১নং যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে মহানগরের অধীন থানা কমিটি গঠিত হবে এবং মহানগর আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন পরবর্তী কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। বিষয়টি জানার পর বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিএনপির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতার অনুরোধে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর গুলশানের একটি রেস্টুরেস্টে রনির সঙ্গে সোহরাব উদ্দিন বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকারও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে সোহরাব উদ্দিন হঠাৎ অসুস্থ হন। অভিযোগ রযেছে, অসুস্থ হওয়ার পর তাকে ভালো হাসপাতালে না নিয়ে কালক্ষেপণ করা হলে তার অবস্থার অবনতি হয় এবং ২৩ দিন হাসপাতালের কোমায় থেকে তিনি ১৩ ডিসেম্বর মারা যান। এরপর নানা তদবির করে রনি ২২ ডিসেম্বর গাজীপুর মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হয়ে যান। হঠাৎ করেই অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে ত্যাগী নেতাদের ডিঙিয়ে রনি আহ্বায়ক হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি ৯০-এর ছাত্রনেতারাসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। ফলে মহানগর বিএনপিতে দ্বিধাবিভক্তি শুরু হয়।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকার বলেন, রনির বাবা মান্নান দলের জন্য ত্যাগী নেতা ছিলেন। তার ছেলে দলে পদ পাবেন এটাই স্বাভাবিক। এতে হঠাৎ করে আসা বলার মতো কিছু নেই। এখন তিনি (রনি) দলের জন্য কাজ করছেন।
মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনজুরুল করিম রনি বলেন, এর আগে দলের কোনো কমিটিতে আমি না থাকলেও বাবার সঙ্গে মাঠে-ঘাটে কাজ করেছি। দলে আমি হুট করে এসেছি- কথাটি সঠিক নয়।