সরকার লুটপাট করে দেশকে ফতুর করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচির আগে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সমাবেশে শেষে পদযাত্রাটি গোপীবাগ থেকে শুরু হয়ে টিকাটুলি, দয়াগঞ্জ, রায় সাহেব বাজার হয়ে নয়াবাজার গিয়ে শেষ হয়।
বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও গুলিসহ দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণবিরোধী ফ্যাসিষ্ট সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবীতে আজ এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে র্যাব ও পুলিশকে দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে- আমরা এটি চাইনি, এটি জাতির জন্য লজ্জাকর ‘
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এবারও আমেরিকায় অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি, এতে বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ হয়েছে, সে গণতন্ত্র হরণের অভিযোগই গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পায়নি বাংলাদেশ।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে ক্ষমতাসীনদের চুরির কারণে ব্যাংক খালি, ডলার নেই। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। দেশে আজ গণ-লুট চলছে। এরা যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের সম্পদ লুট করে। গত ১৫ বছরে অনেক অত্যাচার হয়েছে আর নয়, জনগণকে বাসা থেকে বের হতে হবে জেগে উঠতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এরাই দেশটিকে ফতুর বানিয়ে ফেলেছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলছে, মানুষ গরিব হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তারা বলে উন্নয়ন উন্নয়ন, এমন উন্নয়ন হয়েছে যে মানুষ আজ বিদ্যুৎ পায় না, পানি পায় না, গ্যাস পায় না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সারাদেশেই অত্যাচার হচ্ছে, চলছে নৈরাজ্য। আওয়ামী লীগ মূলত সন্ত্রাসী দল। এরা কখনোই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। এরা সবসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। গত কয়েক মাসে তারা আমাদের ১০ জন নেতাকে হত্যা করেছে। বেআইনি ও গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারপরও আন্দোলন থামানো যাচ্ছে না। কারণ এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্রকামী সকল জনতার।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিদেশিদের বলেছেন- উনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে! তার এ বক্তব্যে মানুষ হাসে। আমাদের পরিস্কার কথা এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। শুধুমাত্র নিজ পরিবার ও নেতাদের লুটের কারণে দেশ আজ ফোকলা হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, আপনাদের উন্নয়ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন-বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। তাহলে কেন পাহারা দেন? এখনো সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়েন। সারাদেশের মানুষ নেমে পড়েছে। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, নতুবা রেহাই পাবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছেন, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশান্তরি করে রেখেছেন। তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করতে পেরেছেন? বিএনপি কি ভেঙে গেছে, বরং আরো শক্তিশালী হয়েছে। তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনি নিজেও জানে না উনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। তা তিনি আবার এক সাক্ষাৎকারেও বলেছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় এ সংবিধানে দেশ চলবে না। সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের উত্থাপিত ২৭ দফার আলোকে সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
এতে উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে আরও অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রকিবুল ইসলাম বকুল, কাজী আবুল বাশার, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, রওনাকুল ইসলাম টিপু, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ফজলুর রহমান খোকন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক রাবিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
1 Shares
facebook sharing button
twitter sharing button
advertisement