আজ সাবেক প্রতিমন্ত্রী রহমত আলীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

Slider গ্রাম বাংলা


আবুসাঈদ,গাজীপুর: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

দিনটি উপলক্ষে শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রহমত আলী গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-কালিয়াকৈর) আসন থেকে ১৯৯১ সাল থেকে দশম সংসদ পর্যন্ত পরপর পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমৃত্যু তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সিনিয়র সদস্য ছিলেন।

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন-অর রশীদ ফরিদ জানান, প্রয়াত রহমত আলী এমপির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সকাল ৮টায় কুরআন তেলাওয়াত, ১০টায় কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাড়ে ১০টায় দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এসব কর্মসূচিতে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

নিহতের বড় ছেলে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পরিবারের পক্ষ থেকে শনিবার শ্রীপুর পৌরসভার শ্রীপুর ভবন প্রাঙ্গণে কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, শ্রদ্ধা নিবেদন, কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা ও স্মরণসভা, মিলাদ, দোয়া মাহফিল এবং তবারক বিতরণ করা হবে।

রহমত আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১১ বছর বয়সে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৬২ সালের ১৭ এপ্রিল শ্রীপুর হাইস্কুল মাঠে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৬ সালে ৭ জুন তেজগাঁও শিল্প এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের পক্ষে প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটারের সঙ্গে বুশ ও জি ম চ্যাটার্জির সঙ্গে সমন্বয় করে ফ্লাইট কুরিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ১৯ এপ্রিল ১৯ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী কৃষক লীগের নবগঠিত কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শতাধিক বস্তিবাসী পরিবারকে দিনাজপুরে পুনর্বাসিত করেন। ১৯৭৪ সালে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক হন। ১৯৭৬ সালে ১০ জুলাই মতিঝিলের কমার্শিয়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংক থেকে গ্রেপ্তার হন এবং ২ বছর ৮ মাস ১৭ দিন কারাভোগ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন করে তার ১৭টি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়। ১৯৮৬ সালে কৃষক লীগের সভাপতির পদ লাভ করেন। ১৯৯০ সালে ২৯ নভেম্বর সরকারবিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তার হন।

আওয়ামী লীগের টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-কালিয়াকৈর-১৯৬) সংসদীয় আসন থেকে বিপুল ভোটে পরপর পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বরে স্থানীয় সরকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও ১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের বিশেষ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।

রহমত আলী ১৯৪৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আসর আলী ও মাতা শুক্কুরজান বিবি। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। প্রয়াত নেতার বড় ছেলে ড. জাহিদ হাসান তাপস যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিশ্ব বিজ্ঞান সমিতির সদস্য, ছোট ছেলে অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় বাবার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয়, জেলা ও কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় রয়েছেন। একমাত্র মেয়ে অধ্যাপক রুমানা আলী টুসি সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *