বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৪৮৩টি স্টেশন চালু রয়েছে, বন্ধ ১১১টি। কয়েকটি স্টেশনকে আংশিক চালু ধরা যেতে পারে, যেগুলোতে ট্রেন দাঁড়ায় যাত্রাবিলম্বের কারণে। এ অবস্থায় বন্ধ থাকা স্টেশন দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। বন্ধ স্টেশন চালু করতে সম্প্রতি স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টস ম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ শেষে অধিকাংশ বন্ধ স্টেশন চালু করা হবে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক কামরুল আহসান আমাদের সময়কে জানান, বন্ধ স্টেশন চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যাত্রীসেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে দ্রুত এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের সময়কে একই তথ্য জানিয়েছেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদত আলীও।
সূত্রমতে, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে গত ২৫ জানুয়ারি বন্ধ স্টেশন চালু করা নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনটি পর্যায়ে অপারেটিং কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে পূর্বাঞ্চল। আগামী ১ জুলাই থেকে প্রথম ধাপে চালু হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিভাগের অধীনে ২৯টি স্টেশন ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে চালু হবে বন্ধ থাকা ১৯টি স্টেশন।
প্রথম ধাপে চালুর অপেক্ষায় থাকা স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর সেকশনে মিরসরাই। ২০০৮ সালের ২ ডিসেম্বর ‘বি’ ক্লাসের এ স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়া মুহুরীগঞ্জ, ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর বন্ধ হওয়া শর্শদী, ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর বন্ধ হওয়া আলীশহর, ২০১৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর বন্ধ হওয়া নাওটি, ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল ময়নামতি ও ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বন্ধ হওয়া গঙ্গাসাগর স্টেশনও চালু হবে। আখাউড়া-ঢাকা সেকশনের শ্রীনিধী স্টেশনটি বন্ধ হয় ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সালের ১২ আগস্ট আমিরগঞ্জ, ২০২২ সালের ২৫ জুলাই ঘোড়াশাল স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম ধাপে এসব স্টেশনও চালু হবে। এ তালিকায় আরও আছে- ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের সাতমাইর ও ধলা স্টেশন, আখাউড়া-সিলেট-ছাতক বাজার রুটের লংলা, লাকসাম-চাঁদপুর রুটের চিতোষি রোড ও শাহাতলী, লাকসাম-নোয়াখালী রুটের দৌলতগঞ্জ, বজরা, ময়মনসিংহ-ঝারিয়াঝাঞ্জাইল-মোহনগঞ্জ রুটের পূর্বধলা, ঠাকুরাকোনা, মোশারফগঞ্জ, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটের জামালপুর কোর্ট, জামালপুর টাউন-বঙ্গবন্ধ সেতুপূর্ব সেকশনে বাউসি, শহীদনগর বারৈপটল ও হেমনগর। চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর সেকশনের বারৈয়াঢালা স্টেশনটিও চালু হবে প্রথম পর্যায়ে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে চালু হবে- ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ সেকশনের সোহাগী, চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর সেকশনের বাড়বকুণ্ড, আখাউড়া-ঢাকা সেকশনের আশুগঞ্জ, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশনের ইজ্জতপুর, নুরুন্দি, ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ সেকশনের কালিকাপ্রসাদ, নীলগঞ্জ ও বিষকা, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশনের উমেদনগর ও বেগুনবাড়ী, চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর রুটের মস্তাননগর ও কালীদহ, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট সেকশনের সরকারহাট ও ঝাউতলা স্টেশন।
তৃতীয় ধাপে চালু হবে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার সেকশনের টিলাগাঁও, ইটাখোলা ও লস্করপুর, লাকসাম-নোয়াখালী রুটের খিলা, আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের আফজালাবাদ, খাজাঞ্চিগাঁও ও ছাতকবাজার স্টেশন। এ ছাড়া লাকসাম-চাঁদপুর রুটের মধুরোড নামের ‘ডি’ ক্লাস স্টেশনটি এ তালিকায় রয়েছে।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে বর্তমানে ৬৯টি সম্পূর্ণ এবং ৪টি স্টেশন আংশিক বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে গার্ড, স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টস ম্যান নিয়োগ হয়েছে। তাই জুনের পর এসব স্টেশন চালু করা হবে। প্রথম পর্যায়ে পাকশী বিভাগের অধীনে ২০টি স্টেশন চালু হবে। সেগুলো হচ্ছে- শরৎনগর, আজিমনগর, সিতলাই, পাকশী, নন্দনগাছি, ভবানীপুর, মালঞ্চি, ফুলতলা, রুপদিয়া, মির্জাগঞ্জ, দারোয়ানি, বিলাইচ-ী, জামালগঞ্জ, বাসুদেবপুর, তিলকপুর, যশোর ক্যান্ট., জগতি, নাচোল, আনসারবাড়িয়া ও ইয়াসিনপুর। লালমনিরহাট বিভাগে চালু হবে মন্নথপুর, অন্নদানগর, মহেন্দ্রনগর, পাটগ্রাম, মীরবাগ, খোলাহাটী, ভেলুরপাড়া, চৌধুরানী, ভোটমারী, নলডাঙ্গা, রমনাবাজার, কাউগা, ত্রিমোহনী, ভোমরাদহ ও আলতাফনগর।
দ্বিতীয় পর্যায়ে চালু হবে পাকশী বিভাগের অধীনস্থ খোকসা, পাবনা, বেলগাছী, মাছপাড়া, গোয়ালন্দবাজার, নাভারন, মুন্সীগঞ্জ, সাহাগোলা, বহরপুর, চেঙ্গুটিয়া, মেহেরুল্লাহনগর, জয়রামপুর, মোমিনপুর, নলিয়াগ্রাম ও বোয়ালমারিবাজার। লালমনিরহাট বিভাগের অধীনে চালু হবে বাউরা, রাজারহাট ও উলিপুর স্টেশন।
তৃতীয় পর্যায়ে চালু হবে পাকশি বিভাগের অধীনে খানখানাপুর, তালমা, পুকুরিয়া, টেবুনিয়া, চপিতা, ছোটবাহিরবাগ, চন্দ্রদিঘলিয়া, বোড়াশী, গোবরা, কাশিনাথপুর, তাতীবসু, দুবলিয়া, সাতৈর, সহশ্রাইল, দাশুড়িয়া ও চড়াইকোল স্টেশন।