অন্য ভুবনে শামা ওবায়েদ

Slider টপ নিউজ

79513_sama

 

 

 

 

 

শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু। বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের একমাত্র কন্যা। পিতার অনুসৃত পথেই হাঁটছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর রাজনীতিক। প্রতিনিধিত্ব করছেন তরুণ প্রজন্মের। তবে নিজেকে শুধু রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি সদালাপী এই নারী। রাজনীতির বাইরেও রয়েছে তার অন্য এক ভুবন। জড়িত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে। কাজ করেন প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে। যেখানেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকের খবর পান ছুটে যান তিনি। হাত বাড়িয়ে দেন সহায়তার। পাশে দাঁড়ান অসহায়দের। পাকা হাতেই সামলাছেন সংসার ও ব্যবসা। টকশোর আলোচনায় নিয়মিত দেখা যায় তাকে। রাজনীতির এই গ্ল্যামার কন্যার জন্ম ১৯৭৩ সালের ১৪ই মে। রাজধানীর স্বনামধন্য স্কুল স্কলাশটিকায় প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা নেন। উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখানকার স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েশন ও এমবিএ ডিগ্রি নেন। এরপর দীর্ঘ ৬ বছর যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তবে ২০০২ সালে চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করবেন। পরে বাবার ইচ্ছায় রাজনীতিতে নামেন তিনি। কেএম ওবায়দুর রহমানের মৃত্যুর পর পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা) আসন থেকে এমপি নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে হেরে গেলেও এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থাকেন তিনি। ইতিমধ্যে এলাকাবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। সরকারবিরোধী গত আন্দোলনে রাজনৈতিক মামলার শিকার হয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে। তবে রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন উইমেন্স এলায়েন্স ও প্রতিবন্ধীদের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এছাড়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যের পাশাপাশি ইয়ুথ মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিরও সদস্য তিনি। কূটনৈতিক মহলেও রয়েছে তার শক্তিশালী যোগাযোগ। তবে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজধানীতে আলোচনা সভা, মানববন্ধন কর্মসূচিতে বেশি দেখা যায় তাকে। রাজধানীতে গুম হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে দিতে রাজপথে সোচ্চার ছিলেন এই সাহসী নারী। গুমের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে আলোচনা সভার পাশাপাশি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছেন দেশব্যাপী। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা-চিকিৎসায় সহায়তা দেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। এছাড়া দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদেরও সহায়তা করেন। কাজ করছেন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। এছাড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি। স্বামীর ব্যবসার পাশাপাশি নিজেও একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গড়েছেন। সেটার দেখভাল নিজেই করেন তিনি। একাধিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সময় দেন সবকটিতে। তবে কোন রুটিন লাইফ পছন্দ করেন না। ঘুম থেকে উঠেই দুই ছেলেমেয়েকে স্কুলের জন্য তৈরি করেন। এরপর নিজের প্রতিষ্ঠানের অফিসে যান। সপ্তাহে একদিন বা দুদিন মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেন। তাদের সঙ্গে সংগঠনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেন। প্রতি মাসেই এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর নিতে নগরকান্দায় যান। শীতবস্ত্র বিতরণ, অসহায় ও দুস্থদের সহায়তা দেন। ভবিষ্যতে হিউম্যান রাইটস ও শিক্ষা সেক্টর নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে তার। দেশে নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এটা নিয়ে আরও কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। এছাড়া দেশের অনেক এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তাদেরকে শিক্ষার সুযোগ করে দিতে কাজ করবেন। রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, নর্থসাউথসহ গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলোর শিক্ষার মান নেই। ভবিষ্যতে কখনও সুযোগ পেলে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আরও কিভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে কাজ করবেন। বাবার একটি আদর্শ তাকে খুবই অনুপ্রাণিত করে। সব মতাদর্শের মানুষই তার বাবার কাছে আসতেন। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই সংস্কৃতিটা নেই। কোন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কোন বিএনপি নেতা কথা বললে তাকে সবাই দালাল বলে আখ্যায়িত করে। এই অপসংস্কৃতি খুবই পীড়া দেয় তাকে। ব্যক্তিজীবনে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর মাযহারুল ইসলামের ছেলে শোভন ইসলামের সঙ্গে। তার স্বামীও ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে জড়িত। এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক তারা। ছেলে নবম শ্রেণীতে ও কন্যা অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। সবসময় সাজসজ্জা ও রুচিশীল পোশাক পরতেই বেশি পছন্দ করেন শামা ওবায়েদ। সময় পেলে স্বামী-সন্তানদের জন্য নিজেই রান্না করেন। এছাড়া থাই ও জাপানিজ খাবার খেতে ভালবাসেন। যতটুকু অবসর পান সেটুকু কাটে বই পড়ে, নয়তো মুভি দেখে। ছুটিতে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে দেশের বাইরে ঘুরতে পছন্দ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *