বগুড়া থেকে: শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা মোড়। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দুঃসাহসিক অবদানের জন্য সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতি ধরে রাখতে ১১ বছর আগে এখানে স্থাপিত হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’। সেই বীর শহীদদের স্মৃতির মিনার ঢাকা পড়েছে ছাত্রলীগের প্রচারণার ব্যানার-পোস্টারে। আড়ালে চলছে মাদকসেবন। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
ঢাকা-উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় প্রতিদিন অসংখ্য লোকের যাতায়াত। বাইরের কেউ শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশ করলেই চোখ আটকে যাবে এই স্মৃতির মিনারে।
বুধবার (১০ জুন) বেলা ১২টা। ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’র চারপাশ যান চলাচলে ব্যস্ত। এর চারদিকে ফলাও করে টাঙানো ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠনগুলোর প্রচারণার নানা ব্যানার-পোস্টার-প্ল্যাকার্ড।
গত একমাস আগে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন কেন্দ্র করে নিজেদের পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় প্রচারণা চালিয়ে ঢেকে ফেলা হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’। সম্মেলেন শেষ হলেও সরেনি সেসব ব্যানার-পোস্টার।
ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জিহাদ আল হাসান জুয়েল, ছাত্রলীগ নেতা শামীম ফেরদৌস টুটুল, রনি সরকার ছাড়াও বেশ কয়েকজন নেতার ছবিসহ প্ল্যাকার্ডে আড়াল এই স্মৃতির মিনার।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের বড় ছবি দিয়ে জাতীয় শ্রমিকলীগের চার নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি শাজাহান আলী শেখ টাঙিয়েছেন বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি বড় ব্যানার। বৈশাখ অনেক আগে পেরুলেও ব্যানারটি রয়েই গেছে।
অন্যদিকে এসব ব্যানার-পোস্টার-প্ল্যাকার্ডের আড়ালে দিনে-দুপুরে চলছে মাদকসেবন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনজন ব্যক্তি সেবন করছেন মাদকদ্রব্য।
‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’ ঢাকা পড়ার পাশাপাশি ময়লা-আর্বজনার স্তূপ জমেছে মিনারের পাদদেশ। চারদিকে ঘেরা থাকলেও একটি পথ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে সেখানে দোকানপাটের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলা হয়েছে। এসব থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’র অস্পস্ট নামফলক থেকে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ ১২টা ১ মিনিটে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমান এটি উদ্বোধন করেন।
লম্বা স্তম্ভের চারপাশে ছোট ছোট স্তম্ভের মাথায় বসানো হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মহুতি দেওয়া সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি।
এর চারপাশে শোভাবর্ধনের জন্য কিছু গাছ লাগানো হলেও সেগুলো লতাপাতায় ঢেকে করছে সৌন্দর্যহানি। একপাশে ছবিও ঢেকে গেছে।
সাতমাথা মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জামিরুল বলেন, মিনারটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পৌরসভা কর্তৃপক্ষের।
তবে স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে এমন অপরিষ্কার অবস্থায় থেকে শোভা হারাচ্ছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’। এতে বীরশ্রেষ্ঠদের মর্যাদাহানি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষেরও রয়েছে উদাসীনতা।
এ ব্যাপারে পৌরসভার সচিব সিএম রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন দিবসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। এরপরও ময়লা-আবর্জনা জমে।
‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’র এমন দৈন্যদশা সম্পর্কে এর বেশি মন্তব্য করেনি তিনি।
ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছে, নতুন কমিটিও হয়েছে। কিন্তু সরেনি ব্যানার-পোস্টার। সংগঠনের প্রচারণায় ‘বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার’র সৌন্দর্যহানির বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।