ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশুমৃত্যু বাড়ছে

Slider নারী ও শিশু


ঢাকা: তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিবরণী থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫১ হাজার ১৯৮ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তিন লাখ ৪১ হাজার ৪৫৫ জন। একইসময়ে সারাদেশে ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৭৮ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঠাণ্ডায় বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর অধিকাংশই শিশু বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়।

অপরদিকে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত তিন মাসে শুধু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাটিতে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৮৪ জন। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে ৩০৮ জন, নভেম্বরে ৩১৩ জন, ডিসেম্বরে ৪৩৭ জন নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালটিতে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি রোগী সংখ্যা প্রায় আড়াইশ। শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে আরও ৪০ জন। চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ছয় শিশুর মৃত্যু হয়। গতমাসে শিশু হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীর এক চতুর্থাংশ ছিল নিউমোনিয়া আক্রান্ত।

বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে বিভিন্ন রোগের জীবাণু বেড়ে যায়। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাটাইসিস, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা ব্রংকিওলাইটিস উল্লেখযোগ্য।

শীতকালে এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ঠাণ্ডা অনুসারে গরম কাপড়ের ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা, শিশুদের বিষয়ে অভিভাবকদের অধিকতর সতর্ক থাকার বিষয়ে পরামর্শ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের।

ঠাণ্ডাজনিত রোগের সতর্কতার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে–নজির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের তাপমাত্রা পরিবর্তনের সহ্য ক্ষমতা বড়দের থেকে কম। হঠাৎ করে বেশি ঠাণ্ডা পড়লে তাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হয়। তাই তীব্র শীতে শিশুদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাসায় থাকলে তারা যেন যথাযথ গরম কাপড় পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাইরে বা স্কুলে গেলে তাদের গলায়, কানে বা বুকে যেন ঠাণ্ডা না লাগে খেয়াল রাখতে হবে। মুখে মাস্ক পরলে নাকে ঠাণ্ডা লাগবে না। মাস্ক পরলে ঠাণ্ডাও কম লাগবে আবার ধুলাবালি থেকেও বাঁচবে। এমন শীতে যথাসম্ভব শিশুদের নিয়ে ভ্রমণ না করা। শিশুদের ঠাণ্ডা খাবার না খাওয়ানো। শিশুরা কোনোভাবেই যেন দূষণযুক্ত পানি এবং খাবার না খায়, এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করলেই শিশুদের শীতে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

তিনি বলেন, কোনো শিশু যদি নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয় ও তার বয়স যদি অনেক কম হয়, তাহলে দ্রুত অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে এমন হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। কারণ নবজাতকদের ফুসফুসের ক্ষমতা কম। নিউমোনিয়া আক্রান্ত নবজাতকদের হাসপাতালে ভর্তি করে কয়েকদিন অক্সিজেন দিতে পারলে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি এ সময়ে শিশুদের কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *