ঐতিহাসিক জয়ের পথে মোস্তফা

Slider রংপুর

রংপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের পথে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মোস্তফাফিজার রহমান মোস্তফা। বিপুলভোটের ব্যাবধানে এগিয়ে আছেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শান্তিপুর্নভাবে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে ইভিএম ধীর গতিতে ভোট হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ভোট পোলিং হয়নি।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ২২৯টি ভোটকেন্দ্রে টানা ভোটগ্রহণ হয়। ঘন কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে ভোটাররা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে থাকেন। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৮০টি কেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। ফলাফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙল) পেয়েছেন এক লাখ ১৩ হাজার ৫০৩ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়ালের হাতপাখা প্রতিক নিয়ে ৩৮ হাজার ৯০৩ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতিকের লতিফুর রহমান মিলন পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮৩৯ ভোট এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া (নৌকা) পেয়েছেন ১৮ হাজার ১১৪ ভোট।

ফলাফল প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ইভিএমএ ভোট ধীর গতিতে এবং বিভিন্ন কেন্দ্রের মেশিনের ক্রুটির কারণে ভোট কম পোলিং হয়েছে। যদি স্বাভাবিকভাবে ভোট হতো এবং কাঙ্ক্ষিত ভোট পোল হতে তাহলে এবার আমি দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতাম।

নির্ধারিত সময়ের পরেও অনেককেন্দ্রে ভোট হয়েছে সন্ধার পর পর্যন্ত। একদিকে কিছু কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে, আর অন্য দিকে অন্যকেন্দ্রে চলেছে ভোট। ইভিএমএ ভোট ধীর গতিতে হওয়ায় যারা সাড়ে চারটার আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছিলেন তাদের ভোট নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল সাড়ে চারটার পরও যেসব কেন্দ্রের ভেতরে মানুষ থাকবে সেখানে ভোট গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচন বেশ উৎসবমুখর হয়েছে বলে দাবি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, ভোট সুষ্ঠু এবং উৎসব মুখর হয়েছে। ইভিএমএ ভোট কম পোল হওয়ার কারণ ভোটারদের অসেচতনতা, ইভিএম মেশিন কিছু ত্রুটি দেখা দিলেও আমরা সাথে সাথে সেটা ঠিক করেছি। আমরা মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমএ ভোট প্রশিক্ষণ করেছি। কিন্তু মানুষ আসেনি।

এদিকে সকাল ১০টার দিকে নগরীর লায়নস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। অন্যদিকে সকাল সোয়া ৯টার দিকে নগরীর আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি ৮টা ৫০ মিনিটে ভোট দেওয়ার জন্য কক্ষে ঢুকলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ত্রুটি দেখা দেয়। ভোট দিতে না পেরে ভোট কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মোস্তফা। পরে অবশ্য তিনি ভোট দিতে পেরেছেন।

রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। পুরনো ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ইভিএমে ভোট দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও অনেক কেন্দ্রে আলোক স্বল্পতা এবং ভোট কনফার্ম বিলম্বে হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভোটাররা।

সকাল সাড়ে ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর সময় থেকে নগরীর ১৫৯ নম্বর কেন্দ্র সালেমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা গেছে সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। এই কেন্দ্রটি নগরীর ভিআইপি এলাকা হিসেবে পরিচিত। কেন্দ্রের বাইরে ব্যাপক লোকসমাগম থাকলেও কেন্দ্রের ভেতরে লোকের উপস্থিতি ছিল কম। এখানে পুরুষ কেন্দ্রে এক হাজার ৯৬৬ এবং মহিলা কেন্দ্রে এক হাজার ৯৪৮ ভোট রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবু রায়হান। ইভিএমে ভোট দিয়ে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তবে পুরুষ কেন্দ্রে আলোক স্বল্পতার অভিযোগ তুলেছেন ভোটাররা।

এই কেন্দ্রের ৬৩৫ নম্বর ভোটার জামাল উদ্দিন জানান, আলো স্বল্পতার কারণে পরপর দুটি ভোটে তিনি লাল বাটন চেপেছেন। ফলে মেয়র ও মহিলা কাউন্সিলর পদে তিনি ভোট দিতে পারেননি। তবে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি শিক্ষিত মানুষ হয়েও আলো স্বল্পতার জন্য ভুল করেছি, তাহলে যারা বৃদ্ধ তাদের কি হবে? বিষয়টি আমি প্রিজাইডিং অফিসারকে জানিয়েছি।

এই কেন্দ্রের ৩৩৭ নম্বর ভোটার মিজানুর রহমান মিজু জানান, ইভিএমে ভোটদান অত্যন্ত সহজ। আমি স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিলাম তবে কনফার্ম বাটন চাপার পর এক-দুই মিনিট ভেসে থাকছে। সে কারণে আরেকজন ভোটার গিয়ে আমি কোন প্রতীকে ভোট দিলাম সেটি দেখতে পাচ্ছে। এই ত্রুটি সারানো দরকার।

সকাল ১০টায় ১৫১ নম্বর কেন্দ্র রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আহসানুল্লাহ আহসান জানিয়েছেন ৭১৮ ভোটের মধ্যে সকাল ১০টা ৫মিনিট পর্যন্ত ৩২টি ভোট কাস্ট হয়েছে। শুরুতে কিছু কারিগরি সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেগুলো সমাধান করা হয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। ২২৯টি কেন্দ্রের ১৩৪৯টি কক্ষে ভোট গ্রহণ চলছে। বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ৯ মেয়র প্রার্থী, ১৭৮ জন সাধারণ এবং ৬৭ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *