জয় দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো ইংল্যান্ড। ইরানের বিপক্ষে ৬-১ গোলের বড় জয় পেয়েছে হ্যারি কেইনের দল। বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছে থ্রি লায়ন্স বাহিনী। গোটা ম্যাচজুড়ে ছিল ইংলিশদেরই আধিপত্য। এই দিন জোড়া গোল করেছেন বুকায়ো সাকা। এ জয়ে শেষ ষোলতে উঠার পথ সহজ হয়ে গেল ইংল্যান্ডের সামনে।
চোটের কারণে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট শুরুর একাদশে রাখেননি দলের সবচেয়ে নিয়মিত রাইট ব্যাক কাইল ওয়াকার এবং জেমস ম্যাডিসনকে। একাদশে সুযোগ পেয়েছেন তাই বুকায়ো সাকা, ম্যাসন মাউন্ট, জুড বেলিংহাম। হ্যারি কেইনের নেতৃত্বে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে গড়া দল নিয়ে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড। টটেনহ্যাম তারকা হ্যারি কেইন এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়েরের অফ ফর্ম কিছুটা চিন্তার সমর্থকদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিলেও ইরান পরীক্ষায় উতরে গেছে ইংল্যান্ড।
ম্যাচের শুরু থেকেই বল পায়েই রাখতে পারেনি ইরান, বল ঘুরেছে সাকা, বেলিংহাম, ট্রিপিয়ারদের পায়েই। শুরু থেকেই ইরানের ডি বক্সে আক্রমণ চালিয়েছেন ইংলিশ ফরোয়ার্ডরা। ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় ইরানের গোলকিপার বেইরানভ্যান্ড তার নিজ দলের ডিফেন্ডার মাজিদ হোসেইনির সাথে সংঘর্ষ হয় বল ঠেকাতে গিয়ে। একের সাথে অন্যের ধাক্কা লেগে দু‘জনেই গুরুতর আহত হয়ে পড়েন।
দু‘জনকেই মাঠের ভেতরেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। মাজিদ হোসেইনি খেলায় ফেরত আসেন। এমনকি বেইরানভ্যান্ড নিজেও খেলা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠলে রক্তাক্ত নাক নিয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তার পরিবর্তে কনকাশন সাবস্টিটিউট হিসেবে খেলতে নামেন হোসেন হোসেইনি।
এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা নিজেদের দিকে নেয়ার চেষ্টা করে ইরান। কিন্তু বল দখল করতে গিয়ে লুক শ’য়ের বাম পা মাড়িয়ে দিয়ে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন ইরানি খেলোয়াড় জাহানবক্স। ৩২ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক থেকে গোল করার সুযোগ এসেছিল ইংল্যান্ডের। সেই ফ্রিকিকটিও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা। বারবার চেষ্টার পরে অবশেষে ইরানের রক্ষণ ভাঙে ৩৫ মিনিটে। ম্যাচের প্রথম গোলটি করে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে এগিয়ে নেন ১৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম।
ইল্যান্ডের জার্সিতে টিনেজ মিডফিল্ডারের প্রথম গোল। ইরানের রক্ষণভাগের এই দুর্বল অবস্থার সুযোগ ভালোমতই নেয় ইংল্যান্ড। ৪২ মিনিটের মাথায় হ্যারি ম্যাগুয়েরের হেড থেকে বল পেয়ে সটান ইরানের জালে বল পাঠান আর্সেনাল তারকা বুকায়ো সাকা। ২০০২ সালে সল ক্যাম্পবেলের পর আজ ২০ বছর পর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করলেন কোনো আর্সেনাল খেলোয়াড়।
প্রথমার্ধ শেষে ইনজুরি টাইম দেয়া হয় প্রায় ১৫ মিনিট। ইনজুরি টাইমে গিয়েও আসে একটি গোল, এবারের গোলটি করেন রহিম স্টার্লিং। গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড পাস দেন হ্যারি কেইনকে,হ্যারি কেইন বল বাড়িয়ে দেন স্টার্লিংকে।
প্রথমার্ধেই ছন্দ হারিয়ে দ্বিতীয়ার্ধেও ধুঁকেছে ইরান। জাহানবক্সের বদলি হিসেবে নামেন আলি গোলিজাদে। ইরানি স্ট্রাইকার মেহদি তারেমি তখন তেতে উঠেছেন, বেশ ঝুঁকি নিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন গোল করার। কিন্তু সুবিধে করে উঠতে পারেছিলেন না তিনি। এদিকে গোলকিপার হোসেন হোসেইনি ভুলে ম্যাচের চতুর্থ গোলটি হজম করে ইরান। ৬২ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের এই গোলটিও আসে সাকার পা থেকে। অবশ্য সাকার গোলের তিন মিনিট পরে আলি গোলিজাদের বাড়ানো বলে অবশেষে ইরানের পক্ষে প্রথম গোলটি করতে সক্ষম হন মেহদি তারেমি। তবে তা শুধু হারের ব্যবধান কমিয়েছে।
এরপর দু’পক্ষের দলেই আসে কিছু পরিবর্তন। সাকার পরিবর্তে র্যাশফোর্ড, ম্যাগুয়েরের পরিবর্তে নামেন এরিক ডিয়ের, স্টার্লিং এর পরিবর্তে গ্রিলিশ এবং মাউন্টের পরিবর্তে নামেন ফিল ফোডেন। নতুন বদলি খেলোয়াড়দের পেয়ে আরো যেন খেলায় গতি বেড়ে যায় ইংলিশদের। মাঠে নামার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় হ্যারি কেইনের বাড়ানো বল থেকে ইংল্যান্ডের পক্ষে পঞ্চম গোলটি করেন র্যাশফোর্ড।
একপর্যায়ে এসে গোল ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল ইরান। নুরাল্লিহি মাঝমাঠে ফাকা জায়গা পেয়ে বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তারেমিকে। কিন্তু এরিক ডিয়ের সেই গোলের সুযোগ নষ্ট করে দেন। এদিকে খেলার শেষ ১০ মিনিটে এসেও গোলসংখ্যা বাড়ানোর জন্য তখনো প্রাণপণ অ্যাটাক করে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। ৮৯ মিনিটের মাথায় বেলিংহামের বাড়ানো বল লুফে নেন ক্যালাম উইলসন, তিনি বল এগিয়ে দেন গোলবারের সামনে থাকা জ্যাক গ্রিলিশের দিকে। সহজ ট্যাপ ইনে বল ইরানের জালে পাঠিয়ে দেন তিনি। অবশেষে ৬-১ গোলে ইরানকে বিধ্বস্ত করে মাঠ ছাড়ে গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা।