ঢাকা: রেলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে কানেকটিভিটি বাড়াতে চায় ভারত। বাংলাদেশও এ বিষয়ে আন্তরিক। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফরে রেল কানেকটিভিটই অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। বৈঠকে উঠবে দু’দেশের রেলের ১২টি বিষয়।
ভারত চায় রেল যোগাযোগের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে। বাংলাদেশও নিজেদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে এ সম্পর্ক বাড়াতে আন্তরিক।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মোদির সফরকালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি রেলের কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করবে দু’দেশ। ভারত ও বাংলাদেশ শেষ মুহুর্তে এখন ওই সব চুক্তি ও এমওইউ চূড়ান্ত করার কাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দু’দেশের রেল সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যা ফলপ্রসু হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। কূটনৈতিক পর্যায়েও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে রেলের যেসব বিষয় আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের সংস্কার কাজের জন্য ভারতকে বাংলাদেশের অনুরোধ, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যেই কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু, দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু, বিরল-রাধিকাপুর রেল সংযোগ স্থাপন, রহনপুর-সিঙ্গাবাদ ও শাহজাদপুর-মহিশ্মশান রেল সংযোগ, চিলাহাটি-চেংড়াবান্ধা রেল সংযোগ, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, ফেনী-বিলোনিয়া রেল যোগাযোগ স্থাপন, খুলনা-মংলা রেললাইন সংস্কার এবং বাংলাদেশ-ভারত কনটেইনার সার্ভিস।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, মোদির সফরে রেলের যে ১২টি বিষয় আলোচনায় উঠবে সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে সৈয়দপুর রেলওয়ের ওয়ার্কশপ। ব্রড ও মিটার গেজ উভয় ধরনের কোচ ও ওয়াগন মেরামতে রেলের প্রধান ভরসা সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত এর কার্যক্ষমতা ক্রমেই কমে আসছে। রেলের কোচ, ওয়াগন মেরামতে ওয়ার্কশপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলোর সংস্কার করা যায়নি। ফলে এসবের কার্যক্ষমতা কমে আসছে। ওয়ার্কশপটির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে ভারতের কাছে ঋণ চাইবে বাংলাদেশ।
মোদির সফরে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যেই কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর বিষয়টি আলোচনায় উঠবে। এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব হচ্ছে, ট্রেনের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম ‘দর্শনা-গেদে’ সীমান্তের পরিবর্তে ‘ঢাকা-কলকাতা’য় সম্পন্ন করা হবে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সীমা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
মোদির সঙ্গে বৈঠকে আলোচনায় উঠবে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করার বিষয়ও। বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত দিয়ে খুলনা থেকে কলকাতায় সরাসরি দ্বিতীয় মৈত্র ট্রেন চালু এবং ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চল থেকে ট্রেনে কলকাতায় যেতে হলে ঢাকায় আসার প্রয়োজন হয়। বরিশাল ও খুলনা থেকে ঢাকায় এসে ট্রেনে উঠতে হলে যাত্রীদের যেমন অর্থ ব্যয় হয়, একই সঙ্গে সময়েরও অপচয় হয়। এছাড়া খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক মানুষই ভারতে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ইত্যাদির কারণে খুব বেশিমাত্রায় ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। এসব বিবেচনায় নিয়ে দুই দেশ খুলনা থেকে কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। মোদির সফরে এ বিষয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে আখাউড়া-আগরতলা, রোহনপুর-সিনবাদ, রাধিকাপুর-বিরল এবং কুলাউড়া-মহিষাশন রেলপথ সংযোগে গুরুত্ব দিচ্ছে উভয়দেশ। এসব প্রকল্পে ভারতের আর্থিক সহায়তার দেওয়ার সম্মতি রয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারতীয় ঋণে খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইন সংস্কারে দুটি সংশোধিত প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০১ কোটি টাকা। ২০১০ সালে প্রথম দফায় অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় এটি ১২০ শতাংশ বেশি।
নতুন ব্যয়ের মধ্যে ভারত সরকার ঋণ সহায়তা হিসেবে ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা দেবে। বাকি ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার ব্যয় বহন করবে সরকার। বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুন নাগাদ শেষ করবে। একনেকে অনুমোদন হওয়া এ প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা উঠবে মোদির বৈঠকে।
এছাড়া ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতীয় ঋণে কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের সংস্কার করা হবে।
মোদির বৈঠকে আরও আলোচনায় থাকবে বাংলাদেশ-ভারত কনটেইনার সার্ভিস, বুড়িমারি-বেংড়াবান্ধা এবং ফেনী-বিলোনীয়া রেল লাইন।