লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুর ঘটনায় লঞ্চের চালকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগ। গতকাল শনিবার রাজধানী ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ রোববার দুপুর ১২টায় ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এসব কথা বলেন। এ উপলক্ষে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কে এন রায় নিয়তি এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলার সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবির উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– মনিং সান লঞ্চের মাস্টার সাইদুর রহমান (৩৮), মাস্টার আলামিন (৩৫), ইঞ্জিন ড্রাইভার মাসুদ রানা (৩৮), ইঞ্জিন ড্রাইভার ইমন হোসেন (২৩), সুকানী সালমান (২১) ও সুপারভাইজার ইব্রাহীম খলিল (২৯)।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘গত ৭ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লব কেরানীগঞ্জ থানার কোনাখোলা এলাকা থেকে জিনজিরা-সোয়ারিঘাট হয়ে ঢাকায় আসার পথে নিখোঁজ হন। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে নৌকাডুবিতে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন রাতে মরদেহটি নিখোঁজ দুরন্ত বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। এ ঘটনায় প্রথমে একটি সাধারণ ডায়েরি এবং লাশ উদ্ধারের পরে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করা হয়। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে ডিবি লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম ঢাকা মহানগরী ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত লঞ্চের ছয়জন চালক এবং কারিগরি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার দিন বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করে। পরে বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটের দিকে নূর ফিলিংয়ের কাছাকাছি রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। তিন-চার জন নিয়ে শেয়ারে চলা অটো চালক বিল্লালের ভাষ্যমতে, সন্ধ্যা ৫টা ১৫ থেকে ২০-এর দিকে তাকে জিনজিরা ঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয়।’
সিসিটিভি ফুটেজ ও ডিজিটাল মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয়, জিনজিরাঘাট ও কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ এলাকার নদীর পাড় এলাকায় বিপ্লবের সর্বশেষ অবস্থান ছিল। সেখানে অবস্থান করেও তিনি কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে সবজি সম্পর্কে একাধিকবার কথা বলেছেন।
জিনজিরা ঘাট থেকে সোয়ারিঘাটে চলাচলকারী খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার তথ্যমতে, মাগরিবের নামাজের আগে বা পরে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে তার নৌকা মাঝ নদীতে এলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া মর্নিং সান-৫ লঞ্চ তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়। এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যায়। যাত্রীরা পানিতে তলিয়ে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া এই যাত্রীই নিহত দুরন্ত বিপ্লব বলে জানা যায়।