ঢাকাকে ঘিরে হবে নৌরুট- ওয়াকওয়ে-রেলওয়ে ও ইকোপার্ক

Slider জাতীয় ঢাকা

Dhaka_city_bg_757150560

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার চারপাশে ২৪ কিলোমিটার নৌরুট নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ সমন্বিতভাবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছে।

সম্ভাব্য নৌ-রুটটি হবে আব্দুল্লাহপুর-ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-রায়েরবাজার—বাবুবাজার-সদরঘাট-ফতুল্লা-চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড-শিমরাইল-পূর্বাচল সড়ক থেকে তেরমুখ পযর্ন্ত। নৌরুটে উন্নত মানের ওয়াটার বাস চলাচল করবে। নৌরুটের পাশে নদীতীর ঘেঁষে হবে ইকোপার্ক , ওয়াকওয়ে ও রেলপথ। এজন্যও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে।

৯ এপ্রিল ‘ঢাকার চারপাশে সার্কুলার নৌরুট এবং সড়ক নির্মাণ (ইস্টার্ণ বাইপাস)’ প্রকল্পের ওপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম।

ওয়াটার বাস চলাচলের জন্য ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সম্ভাব্য প্রশস্ততা ১২০ ফুট ও গভীরতা ৮ ফুট রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার অভ্যন্তরীণ যানজট যাতে করে কমে আসে এবং ঢাকার চারপাশের পরিবেশ আরও উন্নত হয় সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।

প্রকল্প প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ইসমাঈল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে যানজট প্রতিদিন বাড়ছেই। এজন্য ঢাকার চারপাশে সার্কুলার নৌরুট চালু করা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আব্দুল্লাহপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের তেরমুখ পর্যন্ত সম্ভাব্য নৌরুটের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার।
রুট চূড়ান্ত করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। এর পেছনে খরচ কতো হবে তা ঠিক করতে আরও কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ২০ মে প্রকল্পের সারসংক্ষেপ পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।

সারসংক্ষেপে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দু’পাশের তীরভূমিতে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। ওয়াকওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি নদীতীরে বসার বেঞ্চ নির্মাণ করা হবে। নদীতীরে ইকোপার্ক নির্মাণ এবং বৃক্ষরোপণও করা হবে। বর্ষার সময় বাঁধের উপরে যাতে পানি না ওঠে সেই লক্ষ্যে রাখা হবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ।

নদী বাঁচিয়ে নৌ-রুটের পাশে মাটি ভরাট করে বাঁধ দেয়া হবে। এই বাঁধের ওপরেই থাকবে ওয়াকওয়ে বা পথচারীদের জন্য হাঁটার পথ। এই পথে আবার কয়েকটি স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি ইকোপার্ক তৈরির করার পরিকল্পনা রয়েছে। সার্কুলার রোড ফেইজ-১ প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) ফারুক আহমেদ  বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা আছে নৌ-রুটের পাশে মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করার। নদীকে রক্ষা করেই হবে এই বাঁধ। বাঁধের ওপর দিয়ে সাধারণ মানুষের পায়ে হাঁটাচলার ব্যবস্থা করা হবে। আর ইকোপার্ক নির্মাণ করা হবে নগরবাসীর বিনোদনের কথা মাথায় রেখে।’

বিআইডাব্লিউটিসি সূত্র আরও জানায়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর গভীরতা বাড়ানো হবে। সেই লক্ষ্যে নদী খনন করা হবে। নৌপথের ওপর লো হাইটের ব্রিজগুলোর উচ্চতা কতটুকু রাখা প্রয়োজন সেটা ঠিক করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ইস্টার্ন বাইপাস প্রকল্পের অধীনে ঢাকা মহানগরীর পূর্বাঞ্চলকে বন্যামুক্ত রাখার ব্যবস্থাও করা হবে প্রকল্পের আওতায়।

ঢাকা সার্কুলার রোড(ফেইজ-২) প্রকল্পের আওতায় দুটি চার লেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ঢাকা সার্কুলার রোড(ফেইজ-১) এর থেকে ফেইজ-২ প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকার চারপাশের নদীতীরে একটিতে দ্রুত গতির এবং অপরটিতে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।

সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, সার্কুলার রুটের বিষয়ে ট্রপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে প্রথমিকভাবে শেষ হয়েছে। প্রাথমিক প্রকল্পের সার-সংক্ষেপ প্রস্তুতির কাজ চলছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) ঢাকা সার্কুলার রোডকে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সার্কুলার রোড ফেইজ-২ এর আওতায় নদীতীরের পাশে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোথায় কী পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে তা চিহ্নিতকরণ, কী পরিমাণ অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করতে হবে তার তালিকা প্রস্তুতকরণ এবং জমি অধিগ্রহণে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের বিষয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

অন্যদিকে সড়ক বিভাগ সূত্র আরও জানায়, জমি অধিগ্রহণ ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণের সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণে স্ব-স্ব জেলার অতিরিক্ত প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করার জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা সার্কুলার রোড প্রকল্পের সড়ক-নৌরুট ছাড়াও ভবিষ্যতে রেল লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে। প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বাস্তবায়ন করবে। এতে জাপান ও চীন অর্থায়ন করবে।

ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেটর অথিরিটির (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক কায়কোবাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা সার্কুলার রোড প্রকল্পে সড়ক-নৌরুট ছাড়াও ভবিষ্যতে রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। এটি আমাদের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) মধ্যে রয়েছে। সেই লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এতে করে একদিকে ঢাকার যানজট কমবে। অন্যদিকে ঢাকার চারপাশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করার পাশাপাশি সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *