ভোট ভোট না খেলে জনসভার টাকা দিয়ে কংকাল কমান!

Slider সম্পাদকীয়


সকল রাজনৈতিক দল বলে জনগন তাদের সাথে আছেন। জনগনের সমর্থনে তারা ক্ষমতায় আছেন ও যাবেন। কিন্তু জনগন কি বলে সেটা কি কারো জানা আছে! জনগনের মতামত নিতে ভোট লাগে। সেই ভোট কই! ভোট ছাড়া জনগনের সমর্থন পাওয়ার দাবী করা বেমানান। আমাদের ইতিহাস বলছে, জনগন হাতের পুতুল। জনগনকে কলা দেখিয়ে গর্তে ফেলানো যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। জনগনের ভোট এখন তামাশার বস্তু। যে যা খুশি তাই বলছে, বলেও যাচ্ছে। কেউ কেউ হাততালিও দিচ্ছে। অদ্ভুদ গণতন্ত্রের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে দৌড়াতে পছন্দ করি। মাটির সাথে সম্পর্ক নেই আমাদের।

১৯৯৬,২০১৪ ও ২০১৮ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকলের মনে থাকার কথা। এর পর ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় প্রতীকের প্রভাবে স্থানীয় সরকার নামে মাত্র কারণ স্থানীয় সরকারের জাতীয় প্রতীক স্থানীয় সরকারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জাতীয় প্রতীকের কারণে স্থানীয় সরকার জনগনের নিকট এখন আর আগের মত প্রভাব ফেলে না। কারণ জাতীয় প্রতীকে চলে যাওয়ার পর স্থানীয় সরকার শুধু নামেই স্থানীয় সরকার, আসলে স্থানীয় সরকার হলো জাতীয় সরকারের আদলে গড়া প্রতিষ্ঠান।

আমাদের অধিকাংশ জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণে জাতীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন আরো বেশী প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় পাশের হিড়িক পড়ে যাওয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও বিনা ভোটে পাশের হিড়িক পড়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি তপসিলে বিনা ভোটে পাশ লেগেই আছে। যে দেশের মানুষ ভাত না ভোট কোনটা চাই জিঞ্জেস করলে ভোটের কথা বলে সে দেশে বিনা ভোটে পশের হিড়ক যেন হিড়ক রাজার দেশের খবর। তবুও আমরা বলতে পারি, গণতন্ত্র আছে। কারণ গণতন্ত্রের কাঠামোতেই আমাদের সংবিধান। কাগজে কলমে আমরা গনতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। স্বীকার না করলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে। তাই আমাদের দেশ ভালো চলছে, ভালো ভোট হচ্ছে ও আমরা ভালো আছি।

বৈদেশিক মন্দায় বিশ্বের মত বাংলাদেশও সমস্যায় আছে। মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ নিম্নবিত্ত মানুষে পরিণত হচ্ছে দিন দিন। উচ্চ বিত্ত থেকে ঝরে গিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে মানুষের ভীড় বাড়ছে। ক্ষুধার্থ মানুষের হা হা কার দিন দিন ভারী করে শব্দ করছে। খাদ্য ও দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বি দামে দিশেহারা মানুষ দিন দিন ক্ষাধার্থ মানুষের পাল্লা ভারী করছে। চাহিদা পূরণ করতে না পেরে মুখে কাপড় দিয়ে বাজারের পাশ কেটে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রিয়জনের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাও যাচ্ছেন।

এই অবস্থায় ক্ষুধার্থ কংকাল গুলোকে এখন পুঁজি করে চলছে ক্ষমতার ব্যবসা। ক্ষমতাসীনরা বলছেন, জনগন যদি চায় তারা ক্ষমতায় থাকবেন আর বিরোধীরা বলছেন, জনগন তাদের সাথে আছে, জনগন পরিবর্তন চায়। কিন্তু জনগন আসলে কি চায় তা তারা কেউ জানে না। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিটিং করলেই জনগনের সমর্থন পাওয়া যায় না। কারণ দিন দিন জনগন রাজনীতিকদের উপর থেকে বিশ্বাস নামিয়ে নিচ্ছেন। জনগন এখন মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে চায়। জনগন খুন হওয়ার জন্য বা পন্য হয়ে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে চায় না। তারা স্বাধীনভাবে মতামত ব্যক্ত করতে চায়। আর সেটা হলেই বলা যাবে কারা জনগনের সমর্থন পাবে। আর তা না হলে ক্ষুধার্থ কংকার গুলোকে টেনে হিচড়ে ভোট কেন্দ্রে নিলে শুধু রাজনৈতিক উৎসব করা যাবে, জনগনের মন পাওয়া যাবে না।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *