দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বহুল কাঙ্ক্ষিত জয় পেল পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার সিডনিতে বৃষ্টি আইনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৩ রানে হারিয়েছে তারা। এই জয়ে সেমিফাইনালের দৌড়ে এখন পর্যন্ত কাগজে-কলমে রয়ে গেলো বাবর আজমের দল। সেই সাথে স্বপ্ন বেঁচে রইলো বাংলাদেশেরও।
এই জয়ে ব্যাটে-বলে সমতালে নেতৃত্ব দিয়েছেন শাদাব খান। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সেই আজ হেরে গেছে টেম্বা বাভুমার দল।
১৮৬ রানের বড় লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা চেয়েছিল যাদের দিকে, তারাই আজ হতাশ করেছেন মোটাদাগে। পাঁচ বল খেলেও ডাক মেরে ফিরেছেন কুইন্টন ডি কক। আর রাইলি রুশো ফিরেছেন ৬ বলে ৭ রানে৷ দুইজনকেই ফিরিয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।
১৬ রানেই দলের দুই কাণ্ডারীকে হারিয়ে শুরুতেই ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এদিন দাঁড়িয়ে যান ক্যাপ্টেন টেম্বা বাভুমা। দলকে পাওয়ার প্লেতে ৪৮ রানের সংগ্রহ এনে তিনিই৷ তবে সপ্তম ওভারে শাদাব খানের শিকার হয়ে ১৯ বলে ৩৬ রানেই থামেন তিনি। এক বল পর এইডেন মার্করামকেও নিজের শিকার বানান শাদাব। শাদাবের জোড়া আঘাত থেকে বের হবার আগেই বৃষ্টি বাঁধায় থেমে যায় ম্যাচ।
ঘণ্টাখানেক পর বৃষ্টি থামলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নতুন লক্ষ্য দেয়া হয় ১৪ ওভারে ১৪২ রান। বৃষ্টির আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে ৯ ওভারে ৬৯ রান করে ফেলায় শেষ ৫ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে করতে হতো ৭৩ রান। ১১ বলেই ২৬ রান সংগ্রহ করে ম্যাচ জমিয়ে তোলার আভাস দেয় প্রোটিয়ারা। তবে ১১ তম ওভারের শেষ বলে শাহিন শাহ আফ্রিদির তৃতীয় শিকার হয়ে হেনরিখ ক্লাসেন ১৫ রানে সাজঘরের পথ ধরলে জয়ের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে দক্ষিণ আফ্রিকার।
পরের ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ওয়েইন পারনেলকে নিজের শিকার বানান ওয়াসিম জুনিয়র। আর ১৩ ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে ট্রিস্টান স্টাবসকে ফিরিয়ে দেন নাসিম শাহ। ততক্ষণে ম্যাচ প্রায় জিতেই নিয়েছে পাকিস্তান, শেষ ওভারে তখনো প্রোটিয়াদের চাই ৪১ রান। শেষ ওভারে তাই ৭ রান তুললেও তা শুধু হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪ ওভারে ১০৮ রানেই থেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
এর আগে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেয় পাকিস্তান। ৭ ওভারে মাত্র ৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা পাকিস্তানের ইনিংস শেষে সংগ্রহ ৯ উইকেটে ১৮৫ রান। মাত্র ২২ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেছেন শাদাব খান, ইফতেখার আহমেদে ব্যাটে আসে ৩৫ বলে ৫১। পাকিস্তানের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের এমন দূর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্য ১৮৬।
এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আরো একবার ব্যর্থ পাকিস্তানের টপ অর্ডার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ তিন অংক ছোঁয়া বাবর-রিজওয়ান জুটি এই আসরে সুপার ফ্লপ। চার ম্যাচে একবারো পাড়ি দিতে পারেনি ২০ রানের গণ্ডি। ১, ১৩, ১৬ এর পর আজ পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে ৪ রানে। ৪ বলে ৪ করে পার্নেলের বলে ফিরেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
সাহসী শুরু করেছিলেন প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নামা ২১ বছর বয়সী মোহাম্মদ হারিস। ২ চার আর ৪ ছক্কায় মাত্র ১১ বলে ২৮ করে ফেলা এই তরুণকে ফেরান এনরিখ নর্টযে। পরের ওভারে বাবর আজমও ফিরেন ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে। আজ ৬ রান করতে বল খরচ করেছেন ১৫টি। এই নিয়ে বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে মাত্র ১৪ রান করেছেন বাবর। গড় ৩.৫ আর স্ট্রাইকরেট ৪৬.৬।
৬.৩ ওভারে শান মাসুদকেও হারায় পাকিস্তান। নর্টজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে তিনি ফিরেন ৬ বলে ২ রানে। মাত্র ৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা পাকিস্তানকে পথ দেখান ইফতেখার আহমেদ ও মোহাম্মদ নওয়াজ। ৫২ রানের জুটি গড়ে ২২ বলে ২৮ করে নওয়াজ ফিরলে, এবার শাদাব খানের সাথে জুটি গড়ে পাকিস্তানের স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করতে থাকেন ইফতেখার।
দু’জনে মিলে মাত্র ৩৬ বলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৮২ রান। তবে এক বলের ব্যবধানে দু’জনেই ফিরেন সাজঘরে। তবে ততক্ষণে ১৭৭ রান চলে এসেছে স্কোরবোর্ডে, বাকি আছে আরো ৫ বল। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটে ১৮৫ রানেই থামে পাকিস্তানের ইনিংস। মাঝে ওয়াসিম জুনিয়র ও শেষ বলে রান আউটের শিকার হন হারিস রউফ।