গাজীপুর: ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত বাসন থানা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি – ছবি : নয়া দিগন্ত
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন করে হুমকি দেয়, তাদেরকে ১১ ডিসেম্বরের পর থেকে কোনো সুযোগ দেয়া হবে না।’
বুধবার (২ নভেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত বাসন থানা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আরো বলেন, ‘সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালে আমরা আঙ্গুল চুষব না। কেউ যদি মনে করে, আমরা আঙ্গুল চুষব, তাহলে তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। আওয়ামী লীগ কচুপাতার পানি নয় যে, টোকা দিলেই পড়ে যাবে।’
তিনি আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে সরকারের পতন হবে মর্মে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিদেশী প্রভুদের আশ্বাসে আপনারা নর্দন-কুর্দন করছেন। বিদেশী প্রভুদের উস্কানিতে গাছে চড়ছেন। মনে রাখবেন, শেষে কিন্তু মই থাকবে না।’
মন্ত্রী আরো বলেন, যদি আপনার আবারো বলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর আওয়ামী লীগ সরকার থাকবে না, তাহলে ১১ তারিখ থেকে যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখে, সংবিধানকে লঙ্ঘন করে, তাদের কথা বলারই সুযোগ দেয়া হবে না। তাই কথাবার্তা হিসেব করে বলবেন।’
বিএনপিকে সতর্ক করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরাও বলে দিতে চাই, জনগণ যদি রুখে দাঁড়ায়, তাহলে আপনাদের যে পরিণতি হবে, সেজন্য আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার সরকার দায়ী থাকবে না।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘যাদের কাছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দূরে থাক, এতিমের টাকাও নিরাপদ নয়, সেই চোরদের আবার বড় গলা। বিদেশে থেকে ইউটিউবে অপপ্রচার করে মনে করছে, এটাই শক্তি। মিথ্যাচার করে, অপপ্রচার করে পার পাবেন না। আমাদের নেত্রী সাংবিধানিকভাবে যেমন রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তেমনি দলকে নিবৃত্ত রাখেন, যাতে কোনো রকম উচ্ছৃখলা না হয়। তাই আমরা অনুরোধ করি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতি করেন, আন্দোলন করেন, আপনাদের কেউ বাধা দেয়নি, দেবেও না। কিন্তু আপনারা যদি আইন হাতে তুলে নেন, যদি সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করে কোনো কর্মসূচি দেন, তাহলে তার পরিণাম ভালো হবে না।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতাকারী অপশক্তিরা বলে, পাকিস্তান ভালো ছিল। বিএনপি বিহারীদের মতো নতুন দালাল সাজতে চায়। যারা পাকিস্তানীদের চায়, মুক্তিযোদ্ধারা জানে, তাদের কিভাবে পাকিস্তান পাঠাতে হয়। কিছু বললেই আপনাদের বিদেশী প্রভুরা বলবে মানবাধিকার নেই। ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়ে, কয়েক লাখ লোক পঙ্গু হয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। সেই মুক্তিযোদ্ধারা যদি রাস্তায় নামে, কী হবে, একবার ভেবে দেখেন।
সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক আফজাল হোসেন সরকার রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মো: সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও আনোয়ার হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর অনুষ্ঠিত বাসন থানা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে অধ্যাপক (অব.) আব্দুল বারীকে সভাপতি, ফাইজুল আলম দিলীপকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আবুল কাশেমকে সাধারণ সম্পাদক, সফিকুল ইসলাম সফি, আমির হোসেন ও রকিব সরকারকে যথাক্রমে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম ঘোষণা করে বাসন থানা আওয়ামী লীগের ছয় সদস্যের আংশিক কমিটির ঘোষণা করা হয়।
এর আগে সম্মেলনকে ঘিরে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থলে এসে ভিড় জমান। কলেজ মাঠ ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়কে ব্যানার, ফেস্টুন, বিল বোর্ড ও তোরণ দিয়ে ছেঁয়ে ফেলা হয়।