বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কখনো সরাসরি দেখেননি। তাকে দেখার ইচ্ছে নেই বলেও দাবি করেছেন মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অবসরে পাঠানো তথ্য ও সম্প্রচারসচিব মো. মকবুল হোসেন।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ কথা বলে তিনি।
এর আগে দুপুর দেড়টায় মন্ত্রণালয়ে আসেন বিদায়ী সচিব। এরপর সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
লন্ডনে কারো সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিদায়ী সচিব বলেন, ‘আমরা লন্ডনে গিয়েছি গত মার্চে। আমরা একটা টিম নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের আশিকুন্নবী ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয় কী, হাতি যখন পাঁকে পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে–এমন একটা কথা আছে না। সেটা তো মার্চ মাসে হয়েছে। এখন সেই প্রশ্নটা আসে কী করে। আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয় না। তারেক রহমানকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।’
যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো বস্তুনিষ্ঠ হলে তা প্রকাশ করার অনুরোধও জানান মকবুল হোসেন।
মকবুল হোসেন বলেন, ‘যদি প্রমাণ হয় বিএনপির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল, আমি যেখানেই থাকি আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন যে সারা জীবন একটাকে বিলং করল, যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, সে বিএনপির লোকের সঙ্গে কানেকশন রাখবে–এটা হয় না। এটা হতে পারে?’
তিনি বলেন, ‘কারণটা আমি জানি না–কেন আমাকে অবসরে পাঠানো হলো। কিন্তু সরকারের এ রাইট আছে। এ বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অতৃপ্তি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি মানুষ নিজেই সবচেয়ে বড় বিচারক। সুতরাং আমি সেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত।’
তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে নেই। আমি যতদিন এখানে কাজ করেছি, সততার সঙ্গে করেছি, নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি, সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার জানা নেই, আমার জ্ঞানের মধ্যে নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধে অবসরে দেয়া হয়েছে, সেটি আমার জানা নেই। যেহেতু এটি সরকার পারেন, আইনের মধ্যেই পারেন, সে জন্য এটি কার্যকর। আমি সরকারের প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল।’
অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে মকবুল হোসেন বলেন, ‘এটি আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধান করতে পারেন। সরকারবিরোধী কোনো অ্যাক্টিভিটিজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি না। যদি থেকে থাকে, সেটি আপনারা প্রচার করতে পারেন, আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নেই।’
অন্যান্য দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই ছিল না। আমার আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। আমার ভাই আমার ফ্যামিলির। যদি ওখানকার এমপিকে জিজ্ঞেস করেন, আমার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী। তাহলে সবচেয়ে ভালো। আমি হল ছাত্রলীগের সহসভাপতিও ছিলাম।’
মন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্বের বিষয়ে বলেন, ‘মানুষ অনেক কথাই বলে। অনেক কিছুই শোনা যায়। শোনা কথা বিশ্বাস না করাই ভালো। আমার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে কেন দূরত্ব থাকবে? আমরা তো সবাই মিলেই কাজ করি। দূরত্বের কথা কেন আসছে আমি জানি না। আমি ওনাকে সম্মান করি।’
মকবুল বলেন, ‘আমরা এখানে চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিস টাইমের পরও সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য, এ মন্ত্রণালয়ের মান-সম্মান-ইজ্জত বাড়ানোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী ছিলাম। আমি এমন কোনোদিন নেই যে দুই ঘণ্টা বেশি কাজ করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটা কথা শুধু বলতে পারি, আমি কখনো আমার জীবনে নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করিনি।’
উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কখনোই (প্রস্তুত ছিলেন না) না, নেভার।’ কারো বিরুদ্ধে কোনো অনুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
মকবুল হোসেন বলেন, ‘ওটা হলে হয়তো-বা ভালো লাগত, যে এ কারণে এ সিদ্ধান্তটা এসেছে। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। হয়তো রাষ্ট্রের কাছে যেটা আছে সেটা আমি জানি না।’
এ সময় আবেগতাড়িত হয়ে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘পথেঘাটে দেখা হবে। সচিবালয়ে দেখা হতে পারে। ভুল-অন্যায় হলে ভুলে যাবেন, ক্ষমা করবেন।’