সারা বছর পর্যটকদের ভীড় থাকে মেঘের উপত্যকা রাঙমাটির সাজেক ভ্যালিতে। তবে ছুটির দিনগুলোতে এখানে উপচে পড়ে পর্যটকরা।
আগে রুম বুকিং না করায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। অনেককেই থাকতে হবে গাড়িতে, মসজিদে, রিসোর্টের বারান্দা বা খোলা আকাশের নিচে। আবার রুমের বাড়তি ভাড়া নেয়ারও অভিযোগ পর্যকটদের।
পর্যকটরা বলছেন, ৩ হাজার টাকার রুম ১২ হাজার টাকা দাবি করছেন রিসোর্ট মালিকরা। আর মালিকরা বলছেন নির্ধারিত ভাড়া ছাড়া কোন বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না।
হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেববর্মন জানান, যারা পরিকল্পনা ছাড়া সাজেকে এসেছেন তারাই বিপাকে পড়েছেন। আমাদের কটেজ আছে ১১২টি। রিসোর্টগুলোতে প্রায় ৪ হাজার পর্যটক থাকতে পারে। সাজেকে আজ ৩ শতাধিকের বেশি গাড়ি প্রবেশ করেছে। ২শত গাড়ি আসলে প্রায় ৪ হাজার পর্যটক হয়ে যায়। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কি পরিমাণ পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন। তিনি আরও জানান, আমরা অনেকে রাতে থাকার জন্য আশপাশে বাসা বাড়িতে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি পর্যটকদের উদ্যেশ্যে বলেন, রুম বুকিং ছাড়া কেউ যেন সাজেক বাড়াতে না আসেন।
শারদীয় দুর্গাপূজা, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদে মিলাদুন্নবীসহ টানা ছুটিতে পর্যটকমুখর হয়ে উঠেছে মেঘের রাজ্য হিসেবে পরিচিত সাজেক ভ্যালি। চারদিকে সমুদ্রের টেউয়ের মতো বির্স্তীণ পাহাড়ের সারি। তুলোর মতো উড়ে যাওয়া মেঘ আর এর মাঝেই যেন মাথা উঁচু করে ঠাঁই নিয়ে ‘সাজেক ভ্যালি’।
শহুরে জীবনের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে মেঘের উপত্যকা সাজেক ভ্যালি ও হ্রদ পাহাড়ের জেলা রাঙামাটিতে ছুটে এসেছেন হাজারও পর্যটক। ইতোমধ্যে বুকিং রয়েছে বেশিরভাগ হোটেল-মোটেলের রুম।
কটেজ রির্সোট ছাড়াও কমিউনিটি ব্যাচে (সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘরে) থাকছেন পর্যটকরা। ছুটি পেলেই পর্যটকরা ছুটে আসেন মেঘ পাহাড় আর লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগে। যার ব্যক্তিক্রম হয়নি এবারও।
সাজেকে বেড়াতে গিয়ে মঈন উদ্দিন বলেন, আমি গতকাল এসেছি। আগেও অনেকবার এসেছি। এতো মনুষ আর আগে কখনো দেখিনি। গতকালও অনেক লোকজন রুম না পেয়ে আশপাশে পাড়ায় বিভিন্ন বাসা বাড়িতে পর্যটকরা অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছে। ছুটির কারণে লোকজনের চাপ অনেক। সেই সুযোগে অনেক রিসোর্ট ভাড়া ও খাবারের দামও কিছুটা বেশি মনে হয়েছে।
সাজেকে বেড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়া পর্যটক পিকু দাশ জানান, আমার ১০-১২ জন বন্ধু মিলে হঠাৎ প্ল্যান করে সাজেক এসেছি বেড়াতে। কিন্তু কোন রিসোর্টে রুম পাইনি। বাধ্য হয়ে গাড়িতে থাকতে হবে। যে পরিবেশ এক রাত আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়ে দিব।
সাজেকে মেঘাদ্রি ইকো রিসোর্ট এর ম্যানেজার বাদন দাশ জানান, শুক্র-শনিবার প্রচুর পর্যটক হয় সব সময়। এর সাথে সরকারি কোনো বন্ধ থাকলে পর্যটকের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। ৫ তারিখ থেকে প্রচুর চাপ যাচ্ছে। রাতে অনেকে রুম খুঁজতে আসে। কিন্তু কোনো রুম খালি নাই। আমাদের ৫ তারিখ থেখে ৯ তারিখ পর্যন্ত রুমগুলো ২ মাস আগের বুকিং।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার জানান, রুম সংকটের বিষয়টি শুনেছি। তবে যারা আগে রুম বুকিং করে সাজেক গিয়েছে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাই পর্যটকদেরও জেনে শুনে আসা উচিত। তাহলে এই সমস্যায় পড়তে হবে না।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উচ্চতার নৈসর্গিক সাজেক ভ্যালি যেন অপার সৌন্দর্য্যরে আধার। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটি। ৬৮৪ বর্গ কিলোমিটারের সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই থেকে কংলাক পাহাড়- দুটো পাহাড় ঘিরেই মেঘের উপত্যকা সাজেক ভ্যালি।
ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকা রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি নামে পরিচিত এই উপত্যকাটি ২০১৪-১৫ সালের পর থেকেই মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বছরের ১২ মাসই সাজেকে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে, তবে ভ্রমণপ্রেমী মানুষের বাড়তি চাপ থাকে ছুটির দিন ও শীতকালে।