কারাগারে প্রেমিকার চুম্বনে প্রেমিকের মৃত্যু

বিচিত্র


মাদক-সংক্রান্ত এক মামলায় প্রেমিকের ১১ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। সেই প্রেমিককে কারাগারে দেখতে গিয়েছিলেন প্রেমিকা। সাক্ষাতের এক পর্যায়ে প্রেমিকের ঠোটে চুমু বসিয়ে দেন প্রেমিকা। আর সেই চুমুতেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন প্রেমিক। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, ওই তরুণী পরিকল্পনা অনুযায়ী ছোট বেলুনে নিষিদ্ধ মাদক মেথামফেটামিন ভরে মুখের ভেতরে নিয়েছিলেন। পরে চুম্বনের সময় তা প্রেমিকার মুখের ভেতরে দিয়ে দেন। আর এই চুম্বনই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় প্রেমিকের জন্য, ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য টেনেসির একটি কারাগারে। দেশটির দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেনেসির এক কারাগারে মেথামফেটামিন ভরা ছোট বেলুন মুখের ভেতর লুকিয়ে চুম্বনের মাধ্যমে কারাবন্দী প্রেমিককে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এক নারীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, চুম্বনের মাধ্যমে দেওয়া মেথামফেটামিনের অতিরিক্ত মাত্রায় কারাবন্দী প্রেমিক মারা যাওয়ায় ওই নারীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

টেনেসির ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন বলেছে, রাজ্যের ডিকসন এলাকার ৩৩ বছর বয়সী রাচাল ডলার্ড নামের ওই নারীর বিরুদ্ধে গত শনিবার সেকেন্ড-ডিগ্রি খুন এবং কারাগারে নিষিদ্ধ মাদক বহনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এই মামলায় ওই নারী কোনও আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন কিনা তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনের তথ্য অনুযায়ী, মাদক-সংক্রান্ত একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ওই নারীর প্রেমিক জোসুয়া ব্রাউনকে (৩০) ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যা আগামী ২০২৯ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রেমিক জোসুয়াকে দেখতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি টেনেসির টার্নি সেন্টার ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে যান ডলার্ড। এ সময় তিনি মুখের ভেতরে আধা আউন্স মেথামফেটামিন ভর্তি ছোট একটি বেলুন লুকিয়ে রাখেন। পরে চুম্বনের সময় ব্রাউনের মুখে সেই বেলুন দিয়ে দেন তিনি।

এক বিবৃতিতে ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ডোরিন্ডা কার্টার বলেছেন, চুম্বনের সময় বেলুনটি গিলে ফেলেন ব্রাউন। দৃশ্যত শৌচাগার ব্যবহার করার পর টয়লেট থেকে এটি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু বেলুনটি পেটের মধ্যে ফেটে যায় এবং মেথামফেটামিনের অতিরিক্ত মাত্রার কারণে মারা যান ব্রাউন।

তবে প্রেমিকা রাচাল ডলার্ড যে ওই মাদক ব্রাউনকে দিয়েছিলেন তা টেনেসির ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন কীভাবে নিশ্চিত হয়েছে সেটি পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

এছাড়া ডলার্ড কীভাবে অথবা কখন মেথামফেটামিন কারাগারে নিয়ে গিয়েছিলেন সেবিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনও তথ্য জানাতে পারেনি কারা কর্মকর্তারা। ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন বলছে, কারাগারে আসা দর্শনার্থীদের শরীর তল্লাশি করা হয় এবং সেখানে মাদক শনাক্ত করার জন্য কুকুরও রয়েছে।

এদিকে, এই মামলায় যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে ডলার্ডকে ৬০ বছরের বেশি জেল দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে ৫০ হাজার ডলার জরিমানাও করা হতে পারে তাকে। ডলার্ডের মা সোনিয়া ডলার্ড মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে বলেছেন, তার মেয়ে দৃঢ়ভাবে বলেছে যে, ‘সে এটা করেনি।’

সোনিয়া বলেন, ‌আমিও কারাগারে উপস্থিত ছিলাম না। যে কারণে বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে আমার মেয়ে এই ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলে জানিয়েছে।

টেনেসির ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনের তদন্ত অফিসের পরিচালক ডেভিড ইমহফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই ঘটনাটি কারাগারে নিষিদ্ধ মাদক পাচারের প্রকৃত ঝুঁকি এবং এর পরিণতি তুলে ধরেছে।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলছে, ২০১৭ সালে ওরিগনের একটি কারাগারে একই ধরনের একটি প্রাণঘাতী চুম্বনের ঘটনা ঘটে। সেই সময় মেলিসা অ্যান ব্লেয়ার নামের এক তরুণী কারাগারে বন্দী প্রেমিক অ্যান্থনি পাওয়েলকে চুম্বনের মাধ্যমে মেথামফেটামিন ভরা সাতটি ছোট বেলুন মুখে দেন। দুটি বেলুন পেটের ভেতর ফেটে গেলে অতিরিক্ত মাত্রার কারণে প্রাণহানি ঘটে অ্যান্থনির। পরে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই প্রেমিকাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *