জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মারা গেছেন এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। চলতি মাসের শুরুর দিকে (৮ জুলাই) তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এক বন্দুক হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি।
হামলার পর কয়েক ঘণ্টার ধরে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে তিনি হেরে গেলেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, শিনজো আবেকে বাঁচানো যেত। নিরাপত্তারক্ষীরাই তাকে বাঁচাতে পারতেন। হত্যার ঘটনার ভিডিও চিত্র পর্যবেক্ষণ করে এমনটাই মত দিয়েছেন অন্তত আটজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবেকে লক্ষ্য করে চালানো প্রথম গুলিটি তার গায়ে লাগেনি। দ্বিতীয়বার গুলি চালালে তা এসে তার পিঠে লাগে। দুই গুলির মাঝখানে আড়াই সেকেন্ড সময়ের ব্যবধান ছিল। এ সময়ের মধ্যে নিরাপত্তারক্ষীরা যদি আবেকে সরিয়ে নিত কিম্বা তার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াত তাহলে হয়তো তার মৃত্যু হতো না।
রয়টার্সের মঙ্গলবারের (১৯ জুলাই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, প্রথম দফায় গুলি মিস হওয়ার পরও আবেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। জাপানের জনপ্রিয় নেতা ও সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি ছিল ওই ব্যর্থতায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জাপানে বন্দুক সহিংসতার ঘটনা তেমন একটা দেখা যায় না। দেশটির রাজনীতিকরা সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণায় অংশ নেন। এ ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তায় তেমন কড়াকড়ি থাকে না। ফলে আবের এ হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত হয়েছে পুরো জাপান।
ওইদিন জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় নারা শহরে এক নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্য দেয়ার সময় ঘাতক তার হাতে বানানো অস্ত্র দিয়ে পেছন থেকে আবেকে গুলি করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালে আবের মৃত্যু হয়। আবের নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি স্বীকার করেছে জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাও। পুলিশ বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে তারা।
আট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ছাড়াও ছয়জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। এছাড়া আবে হত্যার ঘটনায় অনলাইনে প্রকাশিত একাধিক ভিডিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে। এসব ভিডিও বিভিন্ন দিক থেকে ধারণ করা। এসবের মাধ্যমে গুলির আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সব দিক এক করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রচারণার সময় তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল গ্লোবাল থ্রেট সলিউশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আবেক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কেনেথ বোমবাস বলছেন, ‘হামলাকারী প্রধানমন্ত্রীর পেছনেই ছিল। তাদের (নিরাপত্তারক্ষীদের) বিষয়টি খেয়াল করা উচিত ছিল।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জাপানের সংবাদপত্র ইয়োমিউরি বলেছে, হামলাকারী তেতসুইয়া ইয়ামাগামি প্রথম গুলিটি করার আগে আবে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে প্রায় ৭ মিটার বা ২৩ ফুট দূরত্বের মধ্যে চলে আসে। ওই গুলিটি লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হয়। এরপর দ্রুত বেগে আরও কাছে এসে মাত্র তিন মিটার দূরে থেকে দ্বিতীয় গুলিটি করে। এ গুলিটি আবের পিঠে লাগে।
সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা জন সলটিস বলছেন, ‘দেহরক্ষীরা আবের চারপাশে এককেন্দ্রিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রেখেছিল বলে মনে হয়নি। ’টোকিওর নিহন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সংকট ব্যবস্থাপনা ও সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ মিৎসুরু ফুকুদাও নিরাপত্তারক্ষীদের ভুল দেখেন। তিনি বলেন, আবেকে সময়মতো রক্ষা না করে ধাওয়া দিয়ে হামলাকারীকে ধরতে যাওয়া ছিল নিরাপত্তারক্ষীদের ভুল।