বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সড়কপথে জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। দেশটির প্রস্তাব অনুযায়ী তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের ডাউকি থেকে তেল, এলপিজিবাহী গাড়ি বাংলাদেশের সিলেটের তামাবিলে ঢুকবে। এর পর ওই গাড়ি সিলেট থেকে মৌলভীবাজারের শমশেরনগর ও চাতলাপুর চেকপোস্ট হয়ে আরেক ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরার কৈলাশহরে যাবে। ত্রিপুরায় জ্বালানি খালাসের পর আবার সে গাড়ি একই পথে ফিরে যাবে মেঘালয়ে।
জানা গেছে, এ বিষয়ে দুই দেশ শিগগির সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমওইউর খসড়াটি ভারতকে দেওয়ার পর যাচাই করে তারা আবার মতামতসহ পাঠিয়েছে। এখন এই এমওইউয়ের খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাবে। তাদের মতামতসহ পরবর্তীতে তা চূড়ান্ত হবে। এর পর সব কিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশ-ভারত এমওইউ সই করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এমওইউয়ের খসড়ায় ভারতকে আপদকালীন সময় অর্থাৎ দুই মাসের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জ্বালানি পরিবহনের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে দুই সরকারের আলোচনায় এ শর্তের বদল হতে পারে। জ্বালানিবাহী গাড়ির ভারতীয় ভিসা, ইমিগ্রেশন, কাস্টম ও রুট পারমিট সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
এ বছর বন্যা ও ভূমিধ্বসে ভারতের আরেক উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সড়ক ও রেলপথ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যটির বরাক উপত্যকা হয়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস ত্রিপুরা, মনিপুর রাজ্যে পাঠায় দেশটির রাষ্ট্রয়াত্ত্ব সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি); কিন্তু একমাত্র রেলপথটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে মেঘালয় ঘুরে ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরামে জ্বালানি পাঠাতে হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এতে মাসিক পরিবহন ব্যয় পৌনে ৫ কোটি রুপি থেকে বেড়ে সাড়ে ১০ কোটি ছাড়িয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানিয়েছে, সিলেট, মৌলভীবাজার জেলার সড়ক ব্যবহার করে ত্রিপুরা, মনিপুর রাজ্যে জ্বালানি তেল ও এলপিজি পাঠানোর সাময়িক অনুমতি পেতে যাচ্ছে ভারত। কী শর্তে, কতদিনের জন্য ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহার করে জ্বালানি পরিবহন করতে পারবে- তা নির্ধারিত থাকবে এমওইউতে। সওজ এরইমধ্যে এমওইউয়ের খসড়া করে তা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মহাসড়ক বিভাগকে দিয়েছে। গত সপ্তাহে সড়ক পরিবহন বিভাগ খসড়াটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তার আগে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা চেয়ে গত ২২ মে ভারত অনুরোধ জানায়। আসামের বেতকুচি জ্বালানি ডিপো থেকে ত্রিপুরার ধর্মনগর ডিপোর দূরত্ব ৩৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়ছে ১৩৭ কিলোমিটার পথ। ১৫ টন জ্বালানি তেলবাহী ভারতীয় ট্যাংকার এই পথ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা টোল দেবে। খালি অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সময়ও একই পরিমাণ টোল দিতে হবে।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বন্যাপরবর্তী সময়ে আসাম থেকে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল পাঠিয়েছিল ভারত। সেবার প্রতি টন জ্বালানির জন্য বাংলাদেশকে কিলোমিটারে ১ টাকা ২০ পয়সা টোল দিয়েছিল দেশটি। এবার এই টোল কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৮৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে সওজ। চট্টগ্রাম, আশুগঞ্জ বন্দর থেকে (ট্রান্সশিপমেন্ট) পণ্য নিয়ে আসাম, ত্রিপুরায় যাওয়া ট্রাককে একই পরিমাণ টোল দিতে হয়। সওজের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহারে ভারতের প্রস্তাব তারা পেয়েছেন। এ নিয়ে কাজ চলছে।
25
Shares
facebook sharing buttontwitter sharing button