রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে শিশু চুরি করে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে নিজেদের বাচ্চা বলে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করতো- এমন একটি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তারা নিজেরা স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) একটি শিশু চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে কামরাঙ্গীরচর থানাধীন হুজুরপাড়া বেইলি রোড এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় শিশুটিকেও উদ্ধার করা হয়। র্যাবের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার দুজন হলো সুমন (২০) ও মুন্নি (১৮)। তারা শিশু চুরি চক্রের সক্রিয় সদস্য। এছাড়া সুমন একটি ছিনতাই মামলারও আসামি। ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত সে।
তারা এর আগেও বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাসাবাড়ি থেকে শিশু চুরি করে অনেকের কাছে বিক্রি করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছে।
এছাড়া এই চক্রের সদস্যরা এর আগেও বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
র্যাব বলছে, তারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে যেসব বাসাবাড়িতে ছোট শিশু রয়েছে, সেসব বাড়ি টার্গেট করে। সেখানে গিয়ে পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তাদের কাছে সহায়তা চায়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বাসাবাড়িতে থাকার জন্য বিভিন্ন ফন্দিফিকির আঁটে। যাদের ফন্দিফিকিরে আটকাতে পারে, সময় সুযোগ বুঝে তাদের বাসা থেকে বাচ্চা নিয়ে চম্পট দেয় এরা।
এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালেও শিশু চুরির ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে এই চক্রটি। চুরি করা শিশু কাদের কাছে বিক্রি করা হতো এবং কী পরিমাণ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে- এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সাত মাস বয়সী এক শিশু চুরির ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নামে র্যাব-১০। কামরাঙ্গীরচরের ঝাউলাহাটি এলাকায় ভাড়া বাসায় বাস করে সোনিয়া আক্তার (২১) ও তার স্বামী সাগর (২৩)। সাগর পেশায় প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক। সোনিয়ার ভাসুর শাহজাহান (২৮) রিকশাচালক। গত ১৩ জুলাই কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মুন্নি ও সুমনের সাথে শাহজাহানের দেখা হয়। তখন তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে শাহজাহানের কাছে আশ্রয় দেয়ার আকুতি জানায়। পরে তাদের রাখার জন্য ভাই সাগরের বাসায় নিয়ে যায়। সাগর ও তার স্ত্রী মুন্নি আর সুমনকে তাদের বাসায় থাকার জায়গা দেয়।
পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে যথারীতি সাগর ও শাহজাহান কাজে বের হয়। সুমনও তাদের সাথে বেরিয়ে পড়ে। দুপুরে সাগরের স্ত্রী সোনিয়া তার সাত মাসের শিশুকন্যা মোছাইফা ইসলাম জান্নাতকে মুন্নির পাশে খাটের শুইয়ে খাবার তৈরির জন্য রান্নাঘরে যায়। কিছুক্ষণ পর সোনিয়া মেয়ের কোনো সাড়া না পেয়ে এবং মুন্নিকে দেখতে না পেয়ে চিৎকার শুরু করে। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে শিশুকে কোথাও না পেয়ে মোবাইল ফোনে স্বামী ও ভাসুরকে ঘটনা জানায়।
এ ঘটনায় কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে র্যাব ১০-এ একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। পরে র্যাব কর্মকর্তারা বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে চুরি যাওয়া সাত মাসের শিশু মোছাইফা ইসলাম জান্নাতকে কামরাঙ্গীরচর থানার হুজুরপাড়া বেইলি রোড এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় শিশু চুরির সাথে জড়িত দুজনকে।
র্যাব-১০ কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই চক্রের সদস্যদের শিশু চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাই আমরা। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিকে অভিযান চালিয়ে সাত মাস বয়সী শিশুকন্যাকে উদ্ধার করি। সেইসাথে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি বলেন, তারা মূলত বিভিন্ন নিম্নশ্রেণির লোক, রিকশাওয়ালা, সিএনজিচালকদের টার্গেট করে রিকশা ও সিএনজিতে ওঠে নিজেদের অসহায়ত্বের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে চালকদের ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতো। ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে পড়ে যারা তাদের নিজেদের বাসায় থাকার সুযোগ করে দিতো, তারপর সেই বাসায় ছোট শিশু কিংবা আশপাশের বাসায় শিশু থাকলে তাদের নিয়ে চম্পট দিতো।’