কুমিল্লার তিতাসে এক মৃত ব্যক্তির ঘরের গোপন কক্ষ থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ছয় ভরি সোনা ও ১ হাজার ১০০ দিরহাম উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আমির হোসেন ওরফে বিশা পাগলা।
বুধবার (১৩ জুলাই) দুপুরে তার পাঁচ ওয়ারিশের হাতে এ টাকা উঠিয়ে দেয় পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ জুলাই) তার গোপন কক্ষ থেকে এসব স্বর্ণালংকার ও টাকাপয়সা উদ্ধার করেন তার দত্তক মেয়ে তাছলিমা আক্তার ও স্থানীয়রা। পরে টাকা দেখেই পুলিশকে খবর দেন তারা। পুলিশ এসে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সারা রাত ওই বাড়ি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মুড়ে রাখে।
বিশা পাগলা তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের বড় গাজীপুর গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে। আমির হোসেন ওরফে বিশা পাগলার স্ত্রী-সন্তান নেই। তিনি এক ভাগনেকে দত্তক নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪০ বছর ধরে বিশা পাগলা নিজ গ্রামের গাজীপুর মাজার শরিফের পাশে একটি বাড়িতে থাকতেন এবং মাজারের খাদেম হিসেবে কাজ করতেন।
গত শুক্রবার (৮ জুলাই) বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার গোপন কক্ষে থাকা আলমারি ও ওয়ারড্রব খুলে দেখা যায় টাকার পাহাড়। তাতে সবচেয়ে বেশি আছে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। প্রত্যেক বান্ডিলেই টাকার পরিমাণ এক লাখ টাকা।
স্থানীয় আফরোজা নামের এক নারী জানান, অসুস্থ হলেও তিনি কখনো ডাক্তারের কাছে যেতেন না। নিজে কিছু কিনে খেতেন না। কোথাও গাড়িতে চড়ে যেতেন না। এভাবেই তিনি টাকাগুলো সংরক্ষণ করেছেন। এই মাজারে আসা ভক্তরা তাকে স্বর্ণালংকার বিদেশি মুদ্রা ও নগদ টাকা দিয়ে যেতেন। এ ছাড়াও তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণ করতেন। তখন তার ভক্তরা তাকে টাকাপয়সা দিলে সেগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরে জমা করতেন।
টাকা গোনার স্থলে উপস্থিত ছিলেন তিতাসের স্থানীয় সাংবাদিক মহসিন হাবিব। তিনি বলেন, প্রশাসনের উপস্থিতিতে এই টাকা গুনে তার ওয়ারিশদের পাঁচজনের যৌথ ব্র্যাক ব্যাংকের একটি নতুন অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে।
তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুধীন চন্দ্র দাস বলেন, ‘উনি গাজীপুর মাজারের পাশে থাকতেন। ওনার এই টাকা মূলত এই মাজারে ঘুরতে আসা ভক্তরা দিয়েছেন। জীবিত অবস্থায় তিনি কাউকে এ ঘরে ঢুকতে দেননি। তাই কেউ দেখেনি। মারা যাওয়ার পর ওনার ওয়ারিশরা এই টাকা দেখে আমাদের জানালে থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়ে টাকাগুলো গুনে ব্র্যাক ব্যাংকে তার পাঁচ আত্মীয়র নামে খোলা একটি নতুন অ্যাকাউন্টে রাখার ব্যবস্থা করি।’
তিতাস উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা এর আইনি দিকগুলো দেখছি। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’